ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল-গেটেই সন্তান প্রসব

 

গাইবান্ধা সাদুল্লাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া প্রসূতি মা ওই হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশেই সন্তান প্রসব করেছেন। ঈদ-উল-ফিতরের দিন সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

প্রসূতি মা রাশেদা বেগম (৩৫) সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের জামুডাঙ্গা (বাঁধের মাথা) গ্রামের হত দরিদ্র বাদশা মিয়ার স্ত্রী।

ওই প্রসূতির স্বামী বাদশা মিয়া জানান, সোমবার বিকালে রাশেদা বেগমের প্রসব বেদনা উঠে। তখন তাকে একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা ভ্যানযোগে সাদুল্লাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এ সময় ওখানে দায়িত্বরত সেবিকা বাসনা রাণী কোন পরীক্ষা না করেই তাকে গাইবান্ধায় নিয়ে যেতে বলেন। তারপরও তিনি এই প্রসূতিকে ভর্তি করে নিতে সেবিকা বাসনা রাণীকে একাধিকবার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। পরে নিরুপায় হয়ে গাইবান্ধায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিক্সাভ্যানযোগে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। এসময় রাশেদা বেগম ব্যথায় চিৎকার করতে থাকেন। পরে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটকেই একটি ফুটফুটে নবজাতক (ছেলে) প্রসব করেন।

উপজেলার ৯ নং বনগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীন সরকার বলেন, এরপর প্রসূতি মায়ের প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকলে উৎসুক জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেরাও করে। পরে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে নেন। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় রাত সাড়ে ৮টায় ওই প্রসূতি মাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালতে রেফার্ড করা হয়।

সাদুল্লাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মিঠুন কুমার বর্মণ বলেন, নারী রোগী হওয়ায় আমি তাকে দেখি নাই। কর্তব্যরত সেবিকা বাসনা রাণী ও আয়া শিল্পী রাণী ওই রোগী দেখেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে তিনি গাইবান্ধা রেফার্ড করেন।

সেবিকা বাসনা রাণী জানান, ওই প্রসূতি মার সন্তান প্রসবের জন্য বাড়ীতেও চেষ্টা করা হয়েছিল। ফলে রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল। এই জন্য তাকে গাইবান্ধা রেফার্ড করা হয়েছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, শিল্পী রাণী এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত। তারপর তিনি আয়া হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। ইতিপূর্বেও তিনি এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছিল।

সাদুল্লাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা মো. শাহিনুল ইসলাম মন্ডল জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সেবিকার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, এরআগেও গাইবান্ধা সরকারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গত ৬ এপ্রিল এরকম একটি ঘটনা ঘটে। ওখানে দায়িত্বরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রোগী (প্রসূতি মা) ভর্তি না নেওয়ায় গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ইজিবাইকের ভিতরেই একটি ফুটফুটে নবজাতক (ছেলে) প্রসব করেন।IF

Originally posted 2020-05-26 03:45:31.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *