বাড়িতে কোয়ারান্টিনে যে নিয়মগুলি মানবেন

এক দিকে করোনার প্রকোপ কাটিয়ে রোগীরা যেমন সুস্থ হয়ে উঠছেন তেমনি বহু মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্তও হচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যাটা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এই ভাবে রুগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলিতে বেডের জোগান দেওয়ায়ও মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতেই রোগীদের কোয়রান্টিনে থাকার।

তবে বাড়িতে বসে কোয়ারান্টিন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকলেই হবে না বরং জীবনযাত্রায় বেশ কিছু রদবদল ঘটাতে হবে। সকলকে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে যাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা সংক্রমিত না হয়ে পড়েন। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করতে হবে। কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। সেই সঙ্গে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে বেশি করে পানি খেতে হবে। অবসাদে ডুবে না গিয়ে সর্বদা হাশিখুশি থাকতে হবে।এই ছোট ছোট পরিবর্তনই করোনা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমিতদের সাধারণত ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়রান্টিনে রাখাই নিয়ম। সেটা বাড়িতে হোক বা কোনও প্রতিষ্ঠানেই হোক। কিন্তু রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য আরও বেশ কিছুদিন সময় নেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে কোয়ারান্টিনে ২৮ দিন পর্যন্ত থাকা যেতে পারে। এতে শুধু রোগীই নয়, তাঁর পরিবার, সকলেই নিরাপত্তা বোধ করবেন। তাই করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার ১৪ দিন পর কোয়ারান্টিন সেন্টার থেকে ছাড়া পেলেও, আরও ১৪ দিন বাড়িতেই কড়া নিয়ম-কানুনে নিজেদের বেঁধে রাখা ভাল।

৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁরা হাইপারটেনশন, ওবেসিটি, ডায়বিটিস, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে ভুগছেন, কিডনি বা লিভারের সমস্যা রয়েছে অথবা স্টেরয়েড বা সেই জাতীয় কিছু নিতে অভ্যস্ত, বিশেষ ভাবে তাঁদের যত্ন নিতে হবে। সারাক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে। তাঁদের শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল কতটা ওঠানামা করছে, প্রয়োজনে পাল্স অক্সিমিটার বাড়িতে রাখতে হবে। স্যাচুরেশন লেভেল ৯২ শতাংশের কম হলে, রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

গুরুত্ব দিতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে। রোগীর ঘুমানোর সময় উপুড় হয়ে শোওয়াই ভাল। সামনে আসছে বর্ষা, এমন সময় ফাস্টফুড এবং আইসক্রিম এড়িয়ে চলা উচিত, যাতে গলাব্যথা না হয়। মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে, তা-ও বন্ধ রাখতে হবে। নইলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। বাড়িতে থাকাকালীন শুধুমাত্র শুয়ে-বসে না থেকে যোগব্যায়াম বা হালকা ফ্রি হ্যান্ড করতে পারেন রোগী।

রোগীকে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের সঙ্গে পাঁচ দিনের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া যেতে পারে যদি ইসিজি স্বাভাবিক থাকে। সেইসঙ্গে ভিটামিন সি, ডি এবং জিঙ্ক সাপ্লিমেন্টসও দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে। আয়ুর্বেদ বা হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ নিতে চাইলে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তবে করোনা ছাড়াও অন্য কোনও রোগ রয়েছে যাঁদের এবং যাঁদের মধ্যে করোনার উপসর্গ রয়েছে, তাঁরা এ সব এড়িয়ে চলুন।

কোন ভাবে রোগীর সংস্পর্শে পরিবারের লোকজন এবং দেখভালের দায়িত্বে থাকা লোকজন আসলেও তাদেরকে নিরাপদে থাকতে হবে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সপ্তাহে এক দিন হাউড্রক্সিক্লোরোকুইন নিতে পারেন তবে আইসিএমআর-এর প্রোটোকল মেনে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, যা কিনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। হাসপাতাল, নার্সিংহোমে সামনে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছেন যে চিকিৎসাকর্মীরা, তাঁদেরও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

যাঁদের মধ্যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের কোনও উপসর্গ নেই কিন্তু তারা করোনায় আক্রান্ত, তাঁদের সংস্পর্শে এলেও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সামাজিক দূরত্ব বাড়িতেও বজায় রাখতে হবে। রোগীকে যে থালায় খাবার দেওয়া হবে, তা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে ডিসপোজেবল পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে ব্যবহারের পর সেটি ফেলে দেওয়া যায়।

কোভিড-১৯ ভাইরাস একবার শরীরে ঢুকলে, তা দ্বিগুণ হারে প্রতি দিন বাড়তে থাকে। শরীরে ওষুধ পড়লে ১০ দিন পর থেকে তা বন্ধ হয়। তাই কিছু ক্ষেত্রে কোয়ারান্টিন সেন্টার থেকে রোগীকে ১০ দিন পরই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে বিপদ একেবারেই কেটে যায় না। তাই সর্বদা বাড়িতেও রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এদিক ওদিক হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে ভয় পেলে একেবারেই চলবে না। করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হলে মানসিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সমান ভাবে প্রয়োজনীয়।

Originally posted 2020-06-11 05:26:37.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *