স্বাস্থ্যকর্মীদের সেহরির অর্থ দিল এক মানসিক প্রতিবন্ধী

ফারুক একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বয়স আনুমানিক চল্লিশ পার। চট্টগ্রাম শহর কিংবা রাউজানের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ফেরা করে চলে তার জীবন। ভবঘুরে হাত পাতা মানসিক এই প্রতিবন্ধী তার জমানো অর্থ থেকে ঊনিশ শত নব্বই টাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের সেহরি সরবরাহ কার্যক্রমে সহায়তা দিলেন।

যে কার্যক্রমটি শুরু হয়েছে দেশে করোনা যুদ্ধে প্রথম প্রাণ হারানো চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিনের স্মৃতি স্মরণে নেওয়া রাউজানের সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ফারাজ করিম চৌধুরীর নেয়া একটি উদ্যোগ। যেখান থেকে চট্টগ্রাম শহরের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সেহরি খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে রমজানের ১ম দিন থেকেই।

রাউজানবাসীর ব্যবস্থাপনায় তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরী উপলব্ধি করেন মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে লড়ে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিকভাবে সাহস যোগাতে পবিত্র রমজান মাস জুড়ে তিনি সেহরির ব্যবস্থা করবেন।

মহতি এই উদ্যোগের প্রতি প্রতিবন্ধী ফারুক ভালবাসা জানিয়ে ২৬ এপ্রিল (রবিবার) সন্ধ্যায় রাউজান পৌরসভার দায়ারা ঘাটা এলাকায় সেহরি তৈরির রান্নাঘরে এসে গত কয়েক মাসের হাত পেতে জমানো টাকার ১৯৯০ টাকা তুলে দিলেন সেহরি তৈরির অস্থায়ী তহবিলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফারাজ করিম চৌধুরী তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন আজ রাত ৯টা ৪০ মিনিটের সময়। পাঠকের প্রয়োজনে হুবহু ফারাজ করিম চৌধুরীর লিখা স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো: “কয়েকদিন আগে ফারুক নামের একজন সমাজের চোখে মানসিক প্রতিবন্ধী (সম্মানের সাথেই বলছি) আমাদের সেহেরীর কার্যক্রম দেখতে এসে চট্টগ্রামের ভাষায় বলেন, “এগিন কি মাইনষুর লাই গইরতে লাইজ্ঞু দে না?” অর্থাৎ, এগুলো কি মানুষের জন্য করছেন? তাকে যখন বলা হল, হ্যাঁ এগুলো মানুষের জন্যই করা হচ্ছে। তখন সে বললো, “আইও কিছু দিয়ুম!” অর্থাৎ, আমিও কিছু (অর্থ) দিবো। সে আজ আমাদের সেহেরীর খাবার তৈরীর রান্নাঘরে এসে তার পলিথিনের থলে থেকে গুণে গুণে ১৯৯০ টাকা দিল। এই ব্যক্তিটি চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায়। সে কার্লভাটের নিচে ঘুমায়। সে কারো কাছ থেকে খুঁজে খায় না, কেউ নিজে থেকে খাওয়ালে খায়। মানসিক প্রতিবন্ধী বলে ফারুকদের সবাই অবজ্ঞা করে, অথচ ফারুকরা কোন প্রতিবন্ধী নয় বরং এরাই দেশের রত্ন। কথায় আছে ধনী হতে টাকা লাগে না, প্রকৃত ধনী তারাই যাদের বিশাল একটি মন আছে। ফকির বা গরিব সেই সমাজের ধনীরা, যারা মানুষের এই দুর্দিনেও মানুষের হক মেরে খায়। তাদেরই মানসিক প্রতিবন্ধী বলতে হবে, যারা এই দুর্দিনে মানুষের খাবার চুরি করে। ফারুকের জন্য ১৯৯০ টাকা নিশ্চয়ই কম টাকা নয়। আমি চাই আপনারা এই ছবি সকলের কাছে পৌঁছে দিয়ে আমাদের সমাজের ফারুক নামের এই রত্নকে পরিচয় করিয়ে দিন।”

মুহূর্তেই ফারাজ করিম চৌধুরীর এই ফেইসবুক স্ট্যটাসে ৪৬শ’ লাইক ও ৬৫৫ টা শেয়ার ও ২৫০টি কমেন্টস পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

এতে Mohammad Noor Uddin নামে একজন তাতে লিখেন, ‘পথে পথে এমন আরোও অনেক সত্যিকারের মানুষ আছে তাদের স্থান হোক সুন্দর ঘরে। আর যারা টাকার বস্তা নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে নিজেকে বডলোক দাবী করে অসহায়দের জন্য এগিয়ে আসেনা তাদেরকে রাস্তায় রাখা হোক।’

R.K. Rahim লিখেন, এই ফারুক প্রতিবন্ধী হলেও সে সকলের সাথে মিশে থাকতে পছন্দ করে। একবার গিরিছায়া রেস্টুরেন্ট এ আমি যখন আমার মোবাইলে ছবি তুলছিলাম ও হঠাৎ আমাকে এসে বলে সে ও ছবি তুলবে আমার সাথে। আমার একমুহুর্তের জন্য ও মনে হয় নাই ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ও অনেক ভালো। আল্লাহ তাকে তার দানের উছিলায় হলেও যেন সুস্থ করে দেয় আমীন। Saiful Karim লিখেন, এই দুঃসময়ে যারাই চুরি করছে চোরেরা এই ভিক্ষুক থেকে শিক্ষা নিন।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপনি যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান।

এ প্রসঙ্গে সেহেরীর খাবার সরবরাহ কার্যক্রমের অন্যতম দায়িত্বশীল ও রাউজান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, ‘ফারাজ করিম চৌধুরীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাউজানের আপামর জনসাধারণ এই কর্মসূচীতে সহযোগিতা করছেন। মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুকের এই সহযোগিতা অনেকের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।’

রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ এর কার্যনির্বাহী সদস্য সুমন দে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব। ফারুকের মত এরকম মানসিক প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিক্ষা নিতে পারি। এভাবে সবাই সহযোগিতা করলে আমাদের পুরো রমজান মাস জুড়ে এই কার্যক্রম করতে বেগ পেতে হবে না।”

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন আগে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ভিক্ষার ১০ হাজার টাকা কর্মহীনদের সহায়তা তহবিলে দান করে এক ভিক্ষুক। পরে প্রধানমন্ত্রী ঘর তুলে দিচ্ছেন সেই ভিক্ষুককে এমন সংবাদ দেখা যায় খবরের কাগজে। দেওয়া হবে দোকান ও আজীবন চিকিৎসা সুবিধা। এতে উচ্ছসিত ঐ এলাকার মানুষও।

গণ্যমাধ্যম সূত্রে আরো জানা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে যদি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী তাদের ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে এবং আল্লাহ না করুক কেউ মারা গেলে তার ৫ গুণ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা কথাও জানান তিনি।

Originally posted 2020-05-06 20:00:37.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *