সেই সুপার হিরো ডাক্তারসহ নিউইয়র্ক থেকে ১১২ বাংলাদেশি ঢাকায়

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আটকে থাকা ১১২ বাংলাদেশিকে নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের দ্বিতীয় বিশেষ বিমান রোববার বিকাল পৌনে পাঁচটায় ঢাকায় পৌঁছেছে। এ ফ্লাইটে দেশে এসেছেন সেই সুপার হিরো যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারও। তবে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে তিনি ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আলমগীর হোসেন শিমুলযুক্তরাষ্ট্র থেকেঢাকায় ১১২ জন যাত্রী আসার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে যুক্তরাজ্যের ওয়াশিংটন ডিসির প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ এক বিবৃতিতে জানান, শনিবার ১১২ বাংলাদেশিকে দেশটির নিউইয়র্ক থেকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে কাতার এয়ারওয়েজের দ্বিতীয় বিশেষ বিমান। যাত্রীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী, উচ্চ ডিগ্রি অর্জনে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণকারী, দর্শনার্থী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বিমানবন্দরে যাত্রীদের বিদায় জানান। এ সময় কনস্যুলেটের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কাতার এয়ারওয়েজের বিমানটি (কিউ আর ৩৪৫৮) স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৯টায় জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। দোহা বিমান বন্দরে প্রায় ৪ ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করে বিমানটি (কিউ আর ৩৩৯০) রোববার বিকাল ৪ টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ কনস্যুলেট বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে। এর আগে গত ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে আটকে থাকা ২৪২ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের প্রথম বিশেষ বিমান ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফেরে।

এদিকে এ ফ্লাইটে দেশে এসেছেন সেই সুপার হিরো যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারও। ম্যানহাটনের প্রাচীনতম মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফেরদৌস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে বড় আশা ও ভরসার প্রতীক। করোনাভাইরাসের ভয়ে যেখানে বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা ডাক্তার তাদের চেম্বার বন্ধ করে অন্দরে ঢুকে গেছেন, সেখানে নিউইয়র্কের মতো মৃত্যুপুরীতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন ডা. ফেরদৌস। রোববার তিনি দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে। তবে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে তিনি ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,‘প্রিয় বাংলাদেশ। দেশে এসেছিলাম নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা নিয়ে সবার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে। তার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতেও আমি পিছপা হইনি। যখন ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে আমি দেশে এসেছি, তখন একদল লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, আমি নাকি খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা কিংবা খুনি কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই। অথচ পুরো বিষয়টি কাল্পনিক। আমার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। কুমিল্লায় বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের বাড়ি। কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য জেলা। কুমিল্লায় বাড়ি হলেই কেউ খুনি মোশতাকের ভাতিজা কিংবা কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই হয়ে যায় না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই দুই খুনির সঙ্গে আমার পারিবারিক কিংবা আদর্শিক কোন সম্পর্ক নেই। বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আমি তাদেরকে চরম ঘৃণা করি। ফলে যারা এই খারাপ কথাগুলো ছড়াচ্ছেন, বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার; ভালো কাজে বাধা দেয়া। এটা অন্যায়। আমি তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রমাণের জন্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি। যদি মনে করেন আমার সেবা আপনাদের দরকার, তাহলে পাশে থাকুন।’

Originally posted 2020-06-08 05:30:08.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *