পেঁয়াজ নিয়ে ভারতকে প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে চিঠি দিল বাংলাদেশ

কথা ছিলো কোন কারণে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করতে হলে আগেই বাংলাদেশকে জানাবে ভারত। দুদেশের মধ্যে বিরাজমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিবেচনায় গত বছর এমন একটি অলিখিত সমঝোতা হয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে। কিন্তু কথা রাখেনি ভারত।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আকস্মিক পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। অলিখিত এ সমঝোতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভারতের হাতে এর মধ্যে দুইটি চিঠি দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। অনুরোধ জানানো হয়েছে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের।

এর মধ্যে শুরু হওয়া ‘পেঁয়াজ কূটনীতি’ তে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সরাসরি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরেকটি চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়েছে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতীয় হাইকমিশনে দেয়া চিঠি সময় সংবাদের হাতে এসেছে। এ চিঠিতে বলা হয়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ রফতানি বিষয়ে হঠাৎ করে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ। বিষয়টি বাংলাদেশের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশ সম্মানের সঙ্গে জানাতে চায় যে, চলতি বছরের ১৫-১৬ জানুয়ারি দুইদিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের যে বৈঠক হয়েছিল, সেই বৈঠকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ করেছিল। বাংলাদেশ আরও অনুরোধ করেছিল যে, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা দিতেই হয়, তাহলে বাংলাদেশকে যেন আগাম জানানো হয়। এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর অক্টোবরে ভারতে ভিভিআইপি সফরেও তুলেছিলেন এবং তখনও অনুরোধ করা হয়েছিল যে, এমন ঘটনা ঘটলে তা যেন আগাম জানানো হয়।

চিঠিতে ভারতকে মনে করিয়ে দেয়া হয়, দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে যে কথা এবং সমঝোতা হয়েছিল, ভারত সরকারের ১৪ সেপ্টেম্বরের ঘোষণা, সেই কথা এবং সমঝোতার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে পারেনি। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে সোনালি অধ্যায় বিরাজ করছে, বাংলাদেশ সেই সম্পর্কের খাতিরে হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশে আবার পেঁয়াজ রফতানি চালুর অনুরোধ জানাচ্ছে।

এছাড়া মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির নোটিশ আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লি মিশন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কারণ আমাদের মধ্যে অলিখিত কথাটি ছিল যে, ভারত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি কোনো পরিবর্তন আনে, আগে থেকে আমাদের জানিয়ে দেবে। এই ধরনের বোঝাপড়ার মধ্যে আছে, এটা বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে। আমরা তাদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। প্রত্যাশা করছি, এটার একটা ভালো ফলাফল পাবো।

তবে শুধু অনুরোধ জানিয়ে বসে নেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন দেশের সাথে দেন দরবার। সঙ্কট সামাল দিতে ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *