ব্রিটিশ জাহাজ কোম্পানির বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নারীকে মামলার অনুমতি

বাংলাদেশি এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় লন্ডনের হাইকোর্ট তার স্ত্রীকে ব্রিটিশ কোম্পানি মারান (ইউকে) লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে। আটতলা সমান উঁচু জাহাজ থেকে পড়ে এই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে ব্রিটিশ কোম্পানিটি বাংলাদেশের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ওই সুপার ট্যাংকারটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল। চট্টগ্রামের একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ‘ইকতা’ নামের তিন লাখ টন ওজনের বিশালাকৃতির জাহাজে কাজ করার সময় ওপর থেকে পড়ে মারা যান মোহাম্মদ খলিল মোল্লাহ (৩২)।

খলিলকে সুরক্ষা দেওয়াটা ব্রিটিশ কোম্পানি মারান-এর দায়িত্ব ছিল বলে সম্প্রতি লন্ডন হাইকোর্টের একজন বিচারক তার আদেশে বলেছেন। গ্রিসের অ্যাঞ্জেলিকোসিস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মারান ইউকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি জাহাজ কোম্পানি।

যদিও জাহাজ ‘ইকতা’র মালিকানা কিংবা বাংলাদেশি শ্রমিক খলিল মোল্লাহর নিয়োগদাতা ছিল না কোম্পানিটি। তবে পুরনো জাহাজটি বাংলাদেশে পাঠানোয় জড়িত ছিল মারান। ভাঙার জন্য মারানই অন্য একটি কোম্পানির কাছে জাহাজটি বিক্রি করেছিল।

চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলাতে প্রায়ই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ইয়ার্ডগুলোতে শ্রমিকদের সুরক্ষা কিংবা নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থাই নেই। কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই শ্রমিকরা সেখানে কাজ করেন। প্রায়ই বিশাল বিশাল জাহাজের উপর থেকে পড়ে, বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের অরক্ষিত এবং বিপজ্জনক পরিবেশের কথা তুল ধরে খলিল মোল্লাহর স্ত্রী হামিদা বেগমকে সহায়তা দেয়া আইনি সংস্থা লেই ডে আদালতে তাদের যুক্তিতে বলেছে, বিক্রির পর জাহাজ কোথায় ভাঙ্গা হবে; তা ঠিক দায়িত্ব ছিল মারানের হাতে ছিল।

কিন্তু বৈধভাবে এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জাহাজটি ভাঙ্গতে গেলে তারা কম দাম পেত। তাই মুনাফার লোভেই তারা জাহাজটিকে দক্ষিণ এশিয়ার অরক্ষিত শিল্পের হাতে তুলে দিয়েছে। মামলায় জিতলে হামিদা বেগমের এক লাখ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উচ্চ আদালতের এই আদেশ হামিদা বেগমের জন্য ‘বড় ধরনের স্বস্তি’ এনে দিয়েছে বলে মনে করেন লেই ডে’র পার্টনার অলিভার হল্যান্ড। মারান লিমিটেড যদি খলিল মোল্লাহর মৃত্যুর দায় মেনে নেয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ এবং শ্রমিকদের প্রাণের বিনিময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজ বিক্রি করে মুনাফা করবে কিনা, তা নিয়ে অন্তত দ্বিতীয়বার ভাববে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *