বুড়িগঙ্গার মৃত্যুপুরীতে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত
# আরো দুই লাশ উদ্ধার
# লঞ্চটি তুলে তীরে রাখা হয়েছে
# মোট ৩৪ লাশ উদ্ধার
বুড়িগঙ্গার সেই মৃত্যুপুরীতে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। সদরঘাট দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীতে এর আগে কখনো এমন বিভীষিকাময় দৃশ্য, স্বজন হারানোর আর্তনাদ, ডুবে যাওয়া মানুষের আকুতি আর লাশের মিছিল দেখেনি নদী তীরের বাসিন্দারা। সোমবারের এই ঘটনা থমকে দিয়েছে সবার বিবেককে। চোখের সামনে মুহুর্তেই ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে একে একে বেরিয়ে আসা লাশের সারি দেখে অনেকেই চোখের জল ফেলেছেন। প্রিয় মানুষের চলে যাওয়া সইতে না পেরে কষ্টে বুক চাপরিয়েছেন স্বজনদের অনেকে। গতকাল উদ্ধার অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও ছিল মানুষের ভীড়। কারও কারও স্বজনও ছুটে এসেছিলেন তীরে। উদ্ধার অভিযান যখন চলছিল সকলে তীর্থের কাকের মত তাকিয়ে ছিলেন নদীরের মাঝ বরারর। আরও কোন হতভাগার লাশ উদ্ধার হয় কিনা। কেউ ভেসে ওঠে কিনা। তবে অবশেষে দুপুর ও বিকেলে এক ব্যক্তি সহ এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপরই বিকেলে উদ্ধার অভিযানের ইতি ঘোষণা করেন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। তারপরও গতকাল রাত পর্যন্ত সেখানে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মর্নিং বার্ড লঞ্চ ডুবে হতাহতের ঘটনায় সোমবার সকাল থেকে অভিযান চলছিল। সেদিন রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সুমন নামে একজনকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের দল। গতকাল সকালে আবারও অভিযান শুরু করা হয়। অভিযান বিকেল পর্যন্ত চালিয়ে এক ব্যক্তি ও এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। লাশ দুটি উদ্ধারের পরই মিডফোর্ট হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে বিকেলে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ৩৪ টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল বলছে, ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে তেমন কেউ নেই। যে দুজন ছিলেন তাদের লাশ ভেসে উঠেছে। আর কেউ থেকে থাকলেও তা ভেসে উঠতে পারে।
জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড লঞ্চটি তুলতে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় আসতে না পাড়ায় সনাতন এয়ার লিফটিং পদ্ধতিতে তোলা হয়। এ কাজে ১১ টি এয়ার লিফটিং ব্যবহার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। থেমে থেমে দুপুর টা পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালায় ডুবুরী দল। অবশেষে দুইটার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি তারা তুলে আননে সক্ষ্যম হয়। তবে লঞ্চটি তোলার পর বিকেল তিনটার দিকে এক শিশুর লাশ ভেসে ওঠে। এর আগে সকালে এক ব্যক্তি লাশ ডুবে যাওয়া লঞ্চটির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। লঞ্চটি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড একযোগে লঞ্চটি তোলার কাজ করছে। গতকালও ছিল উৎসুক জনতার ভীড়। এই মানুষের ভীড় ঢেলে দুটি লাশ তীরে নিতেও বেগ পেতে হয়েছে উদ্ধার কর্মীদের। লঞ্চটি উদ্ধাকারীরা জানিয়েছেন, উদ্ধারের আগে সেটি পানির নিচে ডুবে কাঁদা মাটির সঙ্গে লেগে ছিল। যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে ১৫ ফুটের মত পানি ছিল। এ কারণে দ্রুত সেটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার এরশাদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে ফের উদ্ধার কাজ শুরু হয়। অভিযানের এক পর্যায়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে আরও এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর আবরও লঞ্চটির পাশে বিকেলে আরেকজনের মরদেহ ভেসে ওঠে। তবে তাদের কারও নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মোস্তফা মোহসিন বলেন, লঞ্চটি এয়ার লিফটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তোলা হয়েছে। এতে ১১ টি এয়ার লিফটিং ব্যবহার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটির ওজন ছিল ১১০ টন। তবে বড় লঞ্চটির ধাক্কায় সেটি উল্টে যায়। তুলে আনা লঞ্চটিতে কোন আঘাতের চিহৃ লক্ষ্য করা যায়নি। অভিযানে একজন ব্যক্তি ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর বিকেলে অভিযান সমাপ্ত করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। তারপরও আমরা তীরে একটি উদ্ধারকারী টিম রেখেছি। যদি কোন লাশ ভেসে ওঠে। তিনি বলেন, এছাড়াও সোমবার রাত দশটার দিকে এক ব্যক্তিকে আমরা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষ্যম হয়েছি। ওই ব্যক্তি হয়ত লঞ্চটির এমন কোন জায়গায় ছিলেন যেখানে অক্সিজেন পেয়েছেন। ফলে তার বেঁচে থাকা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধারের পরই আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।