বিমান টিকেটের জন্য প্রবাসীদের হাহাকার

করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এসে বিপাকে পড়েছেন কয়েক লাখ প্রবাসী। তারা এখন কর্মস্থলে ফেরার জন্য বিমান টিকেট পাচ্ছেন না। টিকেটের জন্য হাকাকার চলছে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম ও সিলেটে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেটে প্রবাসী বেশি থাকায় বিমান অফিস ও বিভিন্ন বেসরকারি বিমান সংস্থার অফিসগুলোয় প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন টিকেটপ্রত্যাশীরা। বিভিন্ন দেশের টিকেট এখন চড়া দামেও বিক্রিও হচ্ছে। কালোবাজারেও এই টিকেট এখন আর মিলছে না। অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা দেশে ফেরায় টিকেটের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া সিডিউল না মেলানোর কারণেও এ সমস্যায় পড়ছেন প্রবাসীরা। বেশিরভাগ প্রবাসী একই দিনে যেতে চাচ্ছেন। ফলে চাপ বাড়ায় টিকেট মিলছে না। এদিকে বেশিরভাগই প্রবাসীর ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা বড় বিপদে আছেন বলে জানিয়েছেন।

গতকাল বিমানের ঢাকা অফিসে টিকেটপ্রত্যাশীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। সকাল থেকেই ভিড় করতে থাকেন টিকেটপ্রত্যাশীরা। তারা মতিঝিলের বিমান অফিসে ভিড় করতে থাকেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের কর্মস্থলে যোগদানের সময় ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আর কিছুদিন দেশে থাকলে এবং কাজে যোগদান করতে না পারলে তারা চাকরি হারাবেন। টিকেটের সঙ্কট বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও ইউরোপের বিভিন্ন রুটে। টিকেটপ্রত্যাশারী গতকাল বিমান অফিসে টিকেটের জন্য ভিড় করলেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে তারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর চলে যান। এ সময় গেটে অবস্থান নেওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিমানের টিকেট পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু কিছু কর্মচারী ও বিভিন্ন টিকেট বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান সেগুলো চড়া দামে ক্রয় করেছে। এরপর তারা এখন সেগুলো আরও চড়া দামে বিক্রি করছেন। বুধবার সিলেটে টিকেটের দাম চড়া রাখায় বিক্ষোভেরও ঘটনা ঘটেছে। বিমানের একটি সূত্র জানায়, বিমানের বিজনেস ক্লাসের টিকেটের চাহিদা বেশি। তা ছাড়া ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদেরও টিকেটের চাহিদা রয়েছে। এসব বিষয় সামাল দিতে বিমানের কর্মচারীরা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের কাছে প্রতিদিনই বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্নজনকে টিকেট দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সিট ও ফ্লাইট থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বিমানের টিকেট কিনতে আসা কয়েকজন জানান, তারা সবাই আবুধাবির টিকেট কিনতে এসেছিলেন কিন্তু তারা ভিড়ের কারণে অফিসের গেট পর্যন্ত যেতে পারেননি। অন্যদিকে তাদের ভিসার মেয়াদও শেষদিকে। আর কিছুদিন পরই তারা আকামা ও ভিসার মেয়াদ হারাবেন। তখন তাদের বেশি বিপদে পড়তে হবে বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতো অন্যদেরও চিত্র একই। এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তাহেরা খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আটকা পড়েছে প্রায় এক লাখ প্রবাসী। ছুটি কাটাতে দেশে এসে তারা আর কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি আন্তর্জাতিক রুটে সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল স্থগিত হয়ে যাওয়ায়। এখন সীমিত আকারে কয়েকটি গন্তব্যে বিমান চলাচল শুরু হলে কর্মস্থলে ফিরতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন আটকে পড়া প্রবাসীরা। কিন্তু বিমানের টিকেট হয়ে উঠেছে যেন সোনার হরিণ। গত তিন দিন ধরে নগরীর ষোলশহরে বাংলাদেশ বিমানের আঞ্চলিক অফিসে টিকেটপ্রত্যাশী প্রবাসীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডাকতে হয়েছে পুলিশ। টিকেটের জন্য চলছে হাহাকার। কবে টিকেট পাবেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারবেন সেই দুশ্চিন্তায় আছেন প্রবাসীরা। বৃহস্পতিবার আবুধাবির টিকেটের জন্য বিমান অফিসে ভিড় করেন হাজারখানেক যাত্রী। আগের দিন বুধবার প্রচণ্ড ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকার পরও মারামারি হাতাহাতি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তাই বৃহস্পতিবার অফিসের গেট বন্ধ রেখে যাত্রীদের বাইরে রাস্তায় লাইন ধরার ব্যবস্থা করা হয়। প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। টিকেটপ্রত্যাশীরা এ পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

বিমান সূত্র জানান, সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালুর পরও করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করায় অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাদের রেসিডেন্স ভিসা বা আকামা রয়েছে তাদের জন্য সেদেশে প্রবেশে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর যাত্রীদের ভিড় বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি টিকেটের চাহিদা আবুধাবির। এখন চট্টগ্রাম থেকে আবুধাবি সপ্তাহে ফ্লাইট রয়েছে চারটি। যাত্রীদের যাদের টিকেট করা আছে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে তাদের কনফার্ম করা হচ্ছে। অনেকে ইকোনমিক ক্লাসের টিকেট না পেয়ে বেশি দামে বিজনেস ক্লাসের টিকেট নিচ্ছেন। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আবুধাবি রুটে অধিকাংশ টিকেটই বুক হয়ে গেছে। সবাই এর মধ্যেই যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু সবার যাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে যাত্রীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও মারমুখী হয়ে উঠছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সপ্তাহে আরও দুটি ফ্লাইট চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

আবুধাবি প্রবাসী নাজমুল হোসেন জানান, আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলা হয়। কিন্তু প্রবাসে যেতে আসতে পদে পদে হয়রানি দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তা নিরসনে কখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। প্রবাসী আজিজুল হক জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি কর্মস্থলে না পৌঁছাতে পারলে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তখন তার যাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এরকম অনেকেই যেতে না পারলে চাকরি হারাবে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে আটকে পড়া সব যাত্রীর গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত করা। এটা কোনো সমস্যা হবে না এজন্য যে বিমানের অধিকাংশ রুটের ফ্লাইট চলাচল এখন বন্ধ রয়েছে।

আটকে পড়া যাত্রীরা বেসরকারি সংস্থার ফ্লাইটগুলোও চালুর দাবি জানিয়ে বলেন, এখন চাহিদা অনুযায়ী যে রুটে চাহিদা বেশি সেখানে অতিরিক্ত ফ্লাইট দিতে সমস্যা থাকার কথা নয়।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *