জনপ্রিয়তা কমছে জো বাইডেনের, হতাশ মার্কিনরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতায় আসার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এক বছরের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে তার জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে। অনেক মার্কিনি মনে করেন, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবার পর সমাজে কোন অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারেননি। আফগানিস্তান থেকে বিশৃংখলভাবে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার থেকে শুরু করে করোনা মহামারি, তেল ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া- এরকম বেশ কয়েকটি কারণে বাইডেনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে অনেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যু ছাড়াও বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আলজাজিরার এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাইডেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার মতো কথা বললেও অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করছেন তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো।
ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের পরই বাইডেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফেরার উদ্যোগ নেন। যা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এক বছরে তিনি বেশ কিছু নীতির কথা বলা বললেও তার বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ট্রাম্পের অনেক নীতির সমালোচনা করলেও এখনো সেগুলো বলবৎ রেখেছেন তিনি। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এখনো যুক্তরাষ্ট্র কেন ইউনেস্কোতে ফেরেনি? এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি ছিলো জাতীয়তাবাদী এবং সংরক্ষণবাদী। কিন্তু সেই তুলনায় বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি মধ্যম শ্রেণীর। বাইডেনের যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বে আরো বিশ্বাসযোগ্য করার প্রতিশ্রুতি সেভাবেই ব্যর্থ হয়েছে, যেভাবে ট্রাম্পের ‘আবারো আমেরিকাকে মর্যাদাপূর্ণ করা’র ঘোষণা ব্যর্থ হয়।
বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতিতে উভয় সংকটাবস্থা দেখা যাচ্ছে। যেমন ধরা যাক, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছেন বাইডেন। কিন্তু মিসরের আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসির মতো স্বৈরশাসকদের ক্ষেত্রে এখনো নমনীয়তা দেখিয়ে চলেছেন। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলেননি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু একইসঙ্গে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের ভূ-খন্ডে নিপীড়ন ও অবৈধ বসতি গড়ে তোলার জন্য সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছেন। ট্রাম্পের নীতি থেকে সরে এসে বাইডেন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে পরামণু চুক্তিতে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও তা এখনো অম্পূর্ণ।
ট্রাম্পের নীতি থেকে সরে এসে মিত্রদেশ ও ন্যাটোর মধ্যে আস্থা ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু গত এক বছরে ইউরোপের সঙ্গে দূরত্ব কমেনি। আফগানিস্তান থেকে তিনি সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সেখানেও ইউরোপের মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ের বড় ঘাটতি দেখা গেছে। সেনা প্রত্যাহারের সময় যে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে- তাতে কার্যত মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে গেছে বলা চলে।
যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের সঙ্গে যে তথাকথিত নিরাপত্তা জোট করেছে তাতে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্কে দুরত্ব বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে ৪০ বিলিয়ন ডলারের সাবমেরিন ও অস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। বাইডেন পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন এই চুক্তির ক্ষেত্রে আনাড়িভাবে কাজ করেছে তার প্রশাসন।
ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমাদের আশঙ্কা রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালাতে পারে। কিন্তু এই ইস্যুতে ফ্রান্স ও জার্মানিকে সক্রিয়ভাবে কাছে টানতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের ভূমিকা কেমন হবে তা নিয়ে দুই পক্ষের কাজে বড় শূন্যতা দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে যখন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা হয়েছে তখন অনেকটাই সাইডলাইনে চলে যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ অবস্থায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর না করে ইউরোপকে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যর্থতার সব দায় বাইডেনের একার নয়। এর কারণ ট্রাম্পের সময় থেকে মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে ইউরোপে নেতিবাচক উপলব্ধি বেড়েছে।
আরো তিন বছর ক্ষমতায় থাকবেন বাইডেন। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে প্রাণশক্তি দেওয়ার যথেষ্ট সময় রয়েছে তার হাতে। পরমাণু চুক্তিতে ফেরা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, সার্বজনীন স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও শান্তির মতো বিষয়ে এখন থেকেই তাকে গুরুত্ব দিতে হবে।