অক্সিজেন ছাড়া ১৩ ঘন্টা বেঁচে থাকলেন সুমন, জনমনে নানা প্রশ্ন

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবির ১৩ ঘন্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে সুমন নামে একজন। পানির নিচে সাধারণত ডুব দিয়ে কতক্ষণ থাকা যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন জানান, সাধারণত পানির নিচে ডুবে গেলে যে কোনো মানুষ এক মিনিট থেকে সর্বোচ্চ দেড় মিনিটের মধ্যে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াটাই স্বাভাবিক ঘটনা। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ২৯ জুন সকালবেলা রাজধানীর সদরঘাটের অদূরে ময়ূর-২ নামে বড় জাহাজের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড নামক লঞ্চের যাত্রী সুমন বেপারি ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় কীভাবে বেঁচে ছিলেন। রাত আনুমানিক ৯টা৩০ মিনিটে ডুবুরিরা যখন টিউবের মাধ্যমে লঞ্চটি ওপরে তোলার চেষ্টা করছিলেন এবং লঞ্চটির একাংশ ওপরে উঠে আসছিল ঠিক তখনই সুমন বেপারি লঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসেন।

তার উদ্ধারের ঘটনায় কেউ বলছেন, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে?,’ কেউ বলছে, ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা রয়েছে।’

সুমন বেপারি কেন কীভাবে বেঁচে থাকলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মর্নিং বার্ড নামক ছোট্ট লঞ্চটি কয়েক সেকেন্ড সময়ের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। লঞ্চটি পানির নিচে উল্টে যাওয়ায় বাতাস আটকে থাকে অর্থাৎ এয়ার পকেট তৈরি হয়। সম্ভবত সুমন বেপারি যেখানে অবস্থান করছিলেন সেখানে পানি প্রবেশ করেনি এবং সুমণ বেপারি এয়ার পকেট থেকে অক্সিজেন নিয়েই বেঁচে ছিলেন। এটাই একমাত্র কারণ, এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো কারণ নেই।

সুমন বেপারিকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ডুবুরিরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে লাইফ জ্যাকেটে ঢেকে এবং শরীর মেসেজ করে তার শরীর গরম করার চেষ্টা করেন। এরপর ওই ব্যক্তি চোখ মেলে তাকান। বর্তমানে তিনি পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি পেশায় একজন ফল ব্যবসায়ী এবং তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর।

রাত ১০টা পর্যন্ত ৩২টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এসব লাশ সারিবদ্ধ অবস্থায় দুটি ট্রলারে রাখা হয়। এছাড়া মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করা দুজনকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে সবগুলো লাশ মিডফোর্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে লাশ শনাক্তের পর তা স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- মিজানুর রহমান (৩২), সত্যরঞ্জন বনিক (৬১), শহিদুল আলম (৬২), সুফিয়া বেগম (৫০), মনিরুজ্জামান (৪২), সুবর্না আক্তার (২৮), মুক্তা (১২), সেলিম হোসেন ভুইয়া (৫০), আফজাল শেখ (৪৮), বিউটি (৩৮), ময়না (৩৫), আমির হোসেন (৫৫), মহিম (১৭), শাহাদাৎ (৪৪), শামীম বেপারী (৪৭), মিল্লাত (৩৫), আবু তাহের বেপারী (৫৮), দিদার হোসেন (৪৫), হাফেজা খাতুন (৩৮), সুমন তালুকদার (৩৫), আয়েশা বেগম (৩৫), হাসিনা (২মাস), আলম বেপারী (৩৮), মোসাম্মৎ মারুফা (২৮), শাহিনুর হোসেন (৪০), তালহা (০২), ইসমাঈল শেখ (৩৫), তামিম (০৭), সুমনা আক্তার (২৫), সাইদুল ইসলাম (৪২), পাপ্পু (৩০) ও বাসুদেব নাথ (৪৫)।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *