দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের ধিক্কার, ক্ষোভ

দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে ধিক্কার-ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। বিক্ষোভ প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। বুধবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীতে দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে।

কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, মিরপুর, উত্তরায় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। শাহবাগে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ।

এসময় জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকালে শাহবাগে গুম-খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণসমাবেশ ও মশাল মিছিল করার ঘোষণা দেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

বুধবার (৭ অক্টোবর) আন্দোলনের শুরুতে দুপুরে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এ সময় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে তারা কালো পতাকা মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন হয়ে প্রেস ক্লাবের দিকে যান। মিছিলে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ। ‘পাহাড় কিংবা সমতলে, লড়াই হবে সমানতালে’, ‘যে হাত নিপীড়কের সে হাত ভেঙে দাও’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘গোলটেবিল না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা।

এক পর্যায়ে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই পল্টন হয়ে জিরো পয়েন্টে যান আন্দোলনকারীরা। এসময় সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। সেখানে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক ভিপি নুরসহ আন্দোলনকারীরা। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুর বলেন, ওরা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে ধর্ষণ করেছে, বিচার বিভাগকে ধর্ষণ করেছে, ভোটাধিকারকে তারা অনেক আগেই ধর্ষণ করেছে। আজকে যদি ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমরা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে না পারি, এই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। দেশে যে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনের রাজনীতি শুরু হয়েছে তা আর চলতে দেয়া যায় না। আজ দেশের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। পুলিশ আজ ধর্ষক ও হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে ভূমিকা রাখছে। জননিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দেশে যে দুর্বৃত্তায়ন চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করুন। আর সেটা না পারলে পদত্যাগ করুন। নতুবা এ দেশের জনগণ আপনাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, পুলিশ ধর্ষকের পাহারাদার হিসেবে কাজ করছে। আমরা বলবো আপনারা ধর্ষকের পাহারাদার না হয়ে জনগণের পাহারাদার হন।

তিনি বলেন, যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারেন না, মা-বোনদের নিরাপত্তা দিতে পারেন না- তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার অধিকার নেই। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত নিরানব্বই শতাংশই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের। যে কারণে একটি ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিবাদ করতে হবে। তিনি সবাইকে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানানোর আহবান জানান। এ সময় আগামী শুক্রবার বিকালে শাহবাগে গুম-খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণসমাবেশ ও মশাল মিছিল করার ঘোষণা দেন নুরুল হক নুর।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মিরপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় মিরপুর ১, ২, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বরের সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে আন্দোলনকারীরা ১০ নম্বর থেকে মিরপুর এক নম্বর সনি সিনেমা হলের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে দুপুর ২টা পর্যন্ত মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। একইভাবে রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। শত শত শিক্ষার্থী ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এতে অংশ নেন। উত্তরা ও টঙ্গীর বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি রাখার দাবি জানান।

এসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের অনুরোধে বিকালে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। উত্তরা পূর্ব জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কাজী হানিফুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করার এক পর্যায়ে বিকালে তারা অবরোধ তুলে নেয়। বেলা ১১টায় ‘উইমেন ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। তারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানান।

এদিকে, ধর্ষণ মামলায় বাদী তথা ভুক্তভোগীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ ও মামলা পরিচালনার যাবতীয় ব্যয়ভার রাষ্ট্র কর্তৃক বহন শতভাগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে টিম পজেটিভ বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে নোয়াখালীসহ সারা দেশে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান সংগঠনটির সদস্য ডাকসুর সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানী। মানববন্ধনে চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর সানী এবং অভিনেত্রী আরিফা পারভীন জামান মৌসুমী উপস্থিত ছিলেন।

রাব্বানী বলেন, আজ সারা দেশে ধর্ষণের মহামারি দেখা দিয়েছে। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় আজকের এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ। ধর্ষকদের এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে আর কেউ এই কাজ করার সাহস না পায়।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *