
কে হবে বন্দরনগরীর মেয়র

একটানা ১৭ দিন প্রচার-প্রচারণা শেষে আজ রবিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেলিনা হায়াৎ আইভী নাকি তৈমূর আলম খন্দকার—আগামী পাঁচ বছরের জন্য কে বন্দরনগরীর মেয়র হবেন, তা নির্ধারণ হবে আজ।
ভোটাররা আজ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সেই রায় দেবেন। উত্সবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
ইতিমধ্যে ভোটের আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী দেওভোগস্হ চুনকা কুটিরে নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনি কৌশল নিয়ে কাজ করেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার দিন কাটিয়েছেন নেতাকর্মীদের রক্ষায় কৌশল নির্ধারণ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে।
গত শুক্রবার মধ্যরাতের পর শনিবার দুপুরে আরেক দফা সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এদিকে শুক্রবার রাতভরসহ গতকালও তৈমূর আলম খন্দকারের সমর্থকদের বিভিন্ন বাড়িঘরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। বিকালে তৈমূর আলম খন্দকারের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালায় বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।
নাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা আক্তার বলেছেন, ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রচার-প্রচারণা শেষে শনিবার নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডেই ছিল সুনসান নীরবতা। কাউন্সিলর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা না চালালেও পরিচিতদের সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ ভোট প্রার্থনা করেছেন।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে লিখিত বা অন্য কোনো মাধ্যমে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। আমরা আমাদের ইলেকশনের রুটিনওয়ার্ক করছি। দাগি আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নির্বাচন এবং ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম আমরা পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ৩০টি টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমরা আরও ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। পাশাপাশি আমাদের পুলিশের প্রায় ৭৬টি টিম রয়েছে। র্যাবের ৬৫টি টিম রয়েছে। বিজিবির ১৪টি দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে এবং আমরা বিজিবির আরো ছয়টি দল ভোটগ্রহণের দিন যুক্ত হবে। এর বাইরে আমাদের আরও ছয় জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বহিরাগত কেউ নারায়ণগঞ্জে নেই। কিংবা সরকারি দলের কেউ প্রশাসনের সহায়তা পাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না মন্তব্য করে বলেন, সেটা সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। সবাই যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তার সব প্রস্তুতিই আমরা গ্রহণ করেছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেছেন, আমার কাছে কোনো প্রার্থী লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি। আমরা কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ পাইনি যে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে বা বাধা প্রদান করা হচ্ছে। যদি কেউ পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করে তা হলে, কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
নির্বাচনি প্রচারণার শেষ দিন বহিরাগতদের চলে যাওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের গতকাল রাতেও শহরের একটি ক্লাবে অবস্থান করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। নাসিকের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই সিটিতে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন। মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন এবং হিজড়া ভোটার চার জন। এদিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হবে কি না এ নিয়ে চলছে সাধারণ মানুষের মধ্যে জল্পনাকল্পনা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ প্রতিনিধির কাছে জানতে চেয়েছেন, ভোট কারচুপি হবে না তো? প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে তো?
এদিকে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, সরকারি দলের প্রার্থীদের ডিজিটাল আইনের মামলা থেকে সাংবাদিকেরাও রেহাই পায়নি। এখনো সেই মামলায় একজন জেল খাটছে। ছাত্রলীগের ছেলে সুজন তার মামলা মাথায় নিয়ে মারা গেছে।
তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করেন, নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করছে। এখানে অনেক লোক আছেন যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। এদের মধ্যে এমন কোনো লোক নেই যাদের বাড়িতে দুই থেকে তিনবার পুলিশ যায়নি। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি আমাদের ওপর এত অত্যাচার করছেন কেন? প্রশাসনের এহেন কাজে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
অন্যদিকে বারবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর একই অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আদিনাথ বসু বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এই ধরনের কার্যক্রম তিনি চালাচ্ছেন। বারবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা ও নিজের নির্বাচনি প্রচার করছেন।
র্যাব-১১-এর সিও তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করবার জন্য আমাদের সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত কাজ করছে।
বিজিবির সিও আল আমিন বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী মিলে আমরা ‘টিম নারায়ণগঞ্জ’ হিসেবে কাজ করছি। যেমনটা আপনারা দেখেছেন এখন পর্যন্ত সব কিছুই শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে এবং আমরা আশা করছি এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।