করোনায় কাজ নেই; ঢাকা ছাড়ছে ভাড়াটিয়া

করোনার কারণে চাকরি বা ব্যবসা হারিয়ে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন৷ চলে যেতে হতে পারে আরো অনেককে৷ ঢাকায় তাদের এখন আর কোনো কাজ নেই৷ তাই যেন আশ্রয়ও নেই৷
ঢাকার দক্ষিণ খান এলাকার কে সি মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে আইটি প্রধান হিসেবে চাকরি করেন নূর হোসেন৷ থাকতেন ওই এলাকারই এক বাসায়৷ ভাড়া দিতেন ৯ হাজার টাকা৷ আর মাসে বেতন পেতেন ১৬ হাজার টাকা৷ সঙ্গে আইটির কাজ করে বাড়তি কিছু উপার্জনও হত৷ স্ত্রী আর এক সন্তান নিয়ে তার সংসার৷ কিন্তু করোনা শুরুর পর বেতন কমিয়ে ৬৫ ভাগ দেয়া হয়৷ তাই তার পক্ষে আর বাসা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় থাকা সম্ভব হয়নি৷ এক মাস আগে তিনি বাসা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সাতক্ষীরা সদরে গ্রামের বাড়িতে চলে যান৷ নূর হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামে আসার সময় পুরো ভাড়ার টাকা দিয়ে আসতে পারিনি৷ আরো ঢাকায় থাকলে আমার পক্ষে ভাড়া দেয়া সম্ভব হতো না৷”
আইটির লোক হওয়ায় তিনি এখনো কিছু বেতন পাচ্ছেন৷ গ্রামের বাড়িতে থেকেই কিছু কাজকর্ম করে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের৷ তবে সামনে আর বেতন পাবেন কিনা নিশ্চয়তা নেই৷
ঢাকার মালিবাগে শহিদুর রহমানের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিলো৷ চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতেন৷ শিক্ষক ছিলেন ১০ জন৷ আর ছাত্র ১৫০ জন৷ ক্লাস না চললেও এপ্রিল পর্যন্ত তিনি স্কুলটি টিকিয়ে রেখেছিলেন৷ কিন্তু এরপর আর পারেননি৷ স্কুলের ভাড়া, শিক্ষকদের বেতন তার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিলনা৷ মে মাসে স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেন৷ আর নিজেও জুনের ১০ তারিখ ঢাকা ছেড়ে সপরিবারে গ্রামের বাড়ি চলে যান৷ তিনি জানান, ‘‘আমি আর ঢাকা ফিরবোনা৷ অনলাইন মার্কেটিং-এর কাজ জানি৷ আমার সাতক্ষীরা শহরে বসে সেটা নিয়েই কিছু করার চেষ্টা করছি৷ ঢাকা আমার শহর নয়৷ আমার শহর হয়নি৷ আমার হবেনা৷”
ঢাকার হাজারীবাগে থাকেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার মালিক আজাদ চৌধুরী৷ তিনি যে ফ্ল্যাটে থাকেন সেই ফ্লাটের দুইটি পরিবার বাসা ছেড়ে গ্রামের বড়িতে চলে গেছে গত মাসে৷ আশপাশ থেকে আরো সাত-আটটি পরিবার চলে গেছে৷ তিনি জানান, ‘‘যারা চলে গেছেন তারা ছোটখাটো চাকরি বা ব্যবসা করতেন৷ মাসিক আয় ছিলো ২৫-৩০ হাজার টাকা৷ কিন্তু তাদের ব্যবসা বা চাকরি টিকে নাই৷ ঢাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে তাদের পক্ষে আর থাকা সম্ভব ছিলনা৷ এতদিন আশায় ছিলেন যে হয়তো করোনা চলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷”
ঘরের জিনিস বিক্রি করে ভাড়া দিচ্ছেন:
ভাড়াটিয়া পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, এপর্যন্ত ঢাকার ৫০ হাজার ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে৷ আর তার চেয়ে আরো অনেক বেশি মানুষ আগের বাসা ছেড়ে দিয়ে কম ভাড়ার বাসায় উঠেছেন বা ওঠার চেষ্টা করছেন৷ যারা ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন তারা এখন আট-নয় হাজার টাকার ভাড়া বাসা খুঁজছেন৷ আর যাদের মাসে আয় ছিলো ২৫-৩০ হাজার টাকা তারা আর এই শহরে টিকতে পারছেন না৷
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার অশঙ্কা করছি৷ যারা ঢাকা ছেড়েছেন তারা চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন৷ আরো অনেকে হারাচ্ছেন৷ তাই আমরা দাবি করেছি এপ্রিল, মে, জুন এই তিন মাস যাদের সামর্থ্য নেই তাদের বাড়ি ভাড়া যে-কোনো উপায়ে মওকুফ করে দেয়া হোক৷ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল ও হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হোক৷”DW

Originally posted 2020-06-23 04:47:04.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *