
জানা যায়নি ৭ বাংলাদেশির নাম পরিচয়
বাংলাদেশি চক্রের হাতে পাচার ৭ বাংলাদেশির মর্মান্তিক মৃত্যু

লিবিয়া থেকে ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ লাম্পেদুসা যাওয়ার পথে মৃত্যু হওয়া ৭ বাংলাদেশির নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তারা কবে, বাংলাদেশ থেকে পাচারের শিকার হয়ে ওই ভয়ঙ্কর পথে পাড়ি জমায়, তা তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে, সিআইডি জানিয়েছে, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ থেকে পাচারের শিকার হয়ে লিবিয়ায় গেছেন, ওই চক্রটির মাধ্যমে ওই ৭বাংলাদেশি ওই পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন। বাংলাদেশি ‘গুডলাক মির্জা’ গ্রুপের হাতে তারা পাচারের শিকার হয়েছেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো তাদের পরিচয় পাইনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে সাত বাংলাদেশির মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তাদের পরিচয় জানা গেলে তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে তারা কোন চক্রের হাতে পাচারের শিকার হয়েছিল।’
২০২০ সালের ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে স্থানীয় পাচারকারী চক্রের গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হয়। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে মানবপাচারের অভিযোগে ১২টি মামলা দায়ের হয়। মামলাগুলোয় পাচারকারী চক্রের গডফাদার, রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকর্তা ও দালালসহ আনুমানিক ২০০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এসব ঘটনায় দেশের পাচারকারী চক্রের বেশ কয়েকজন গডফাদারসহ অর্ধশত সদস্যকে সিআইডি গ্রেফতার করে। মামলাগুলোর মধ্যে ৯টির চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে পল্টন ও বনানী থানায় দায়ের করা দুইটি মামলায় সিআইডি পর্যায়ক্রমে ৩৮ জন ও ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। দুই মামলায় পাচারকারীদের গডফাদার হিসাবে ‘গুডলাক মির্জা’ গ্রুপকে উল্লেখ করা হয়েছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর রুবেল মির্জা, নাসির উদ্দিন মির্জা ও রিপন মির্জা মানবপাচারকারী চক্রের ‘গুডলাক’ গ্রুপের গডফাদার। এই তিন ভাই প্রায় ৭ বছর আগে দুবাই হয়ে লিবিয়ার ত্রিপোলীতে যায়।
ত্রিপোলীতে অবস্থান করে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইটালি নিয়ে যাওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে মানুষ সংগ্রহ করে। ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জনপ্রতি তারা চুক্তি করে। এরপর তাদের দুবাইয়ের টুরিস্ট ভিসায় দুবাইয়ে নেয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে চাটার্ড বিমানে করে দুবাই থেকে লিবিয়ার বেনগাজীতে নেয়। লিবিয়ায় ‘অন এরাইভেল ভিসা’য় তাদের ত্রিপোলীতে গুডলাক মির্জা গ্রুপের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে বড় নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি জমায়।
সিআইডি জানিয়েছে, বিভিন্ন এজেন্সির ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, কর্মচারি ও তাদের দালালরা এসব মানবপাচার চক্রের সদস্য। তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেকার যুবকদের টার্গেট করে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে। এরপর ৫-১০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের অবৈধভাবে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করে। আবার লিবিয়ায় তাদের নেওয়ার পর জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে গুডলাক মির্জা গ্রুপ।
সিআইডি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একে এম আক্তারুজ্জান বলেন, গত ৭ বছরে গুডলাক মির্জা গ্রুপ ইটালি ও স্পেন নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ লাখ মানুষকে দুবাই হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে গেছে। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার ভাগ আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রগুলোর মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে।
আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, ‘গুডলাক মির্জা গ্রুপকে শনাক্ত করতে গিয়ে দেশে আরও ৮০/৯০টি পাচারকারী চক্রের সন্ধান মিলেছে। তবে এই চক্রগুলোর মধ্যে গুডলাক মির্জা গ্রুপ সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর। এই চক্রটির অনুসন্ধান করতে গিয়ে সিআইডি জানতে পারে যে, এর দুবাই বিমানবন্দরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুডলাক মির্জা গ্রুপ দুবাই থেকে চাটার্ড বিমানে করে বাংলাদেশিদের লিবিয়ায় নিয়ে যায়। আমরা দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। জানতে চেয়েছি এই সিন্ডিকেট কারা যারা চাটার্ড বিমানে করে মানুষ পাচার করে।’
সিআইডি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একে এম আক্তারুজ্জান এসব মামলার বিষয়ে বলেন, ‘লিবিয়ার বন্দিশালায় শত শত বাংলাদেশি মানবেতর অবস্থায় আছেন। সেসব বন্দিশালা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে আমরা পাচারকারী গডফাদারদের সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছি।