ঢাকা ছেড়েছে কাতার এয়ারওয়েজের প্রথম ফ্লাইট

টিকেট মিলছে না, ইউরোপ প্রবাসীরা বিপাকে

মোস্তফা ইমরুল কায়েসঃ- শামীম হোসেন থাকেন ইতালিতে। করোনার কারণে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুর তথ্য পেয়েই মঙ্গলবার ছুটে যান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায়। সেখানে সকাল ৬টায় ১৮৬ এসপিএল ওয়েস্টার্ন টাওয়ারের নিচে অবস্থান নেন। সেখানেই কাতার এয়ারওয়েজের অফিস। টিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। একসময় তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় কোনো টিকেট নেই। ইউরোপ ও আমেরিকা যাওয়ার জন্য টিকেট সংগ্রহে গতকাল শুধু শামীম হোসেনই নন, তার মতো আরও অনেক প্রবাসী কাতার এয়ারওয়েজের কার্যালয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সবাইকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।
শামীম হোসেন জানান, তিনি সকালে আসার আগে কাতার এয়ারওয়েজের সবকটি টেলিফোন ও মোবাইল নাম্বারে কল করেছেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। বাধ্য হয়ে অফিসে ছুটে আসেন। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষাও করতে থাকেন। একপর্যায় তাকে হতাশ করে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, সব টিকেট বুকিং শেষ। ইতালি প্রবাসী শামীম হোসেনের মতই দুর্ভোগে পড়েছেন জার্মান প্রবাসী সেলিম মাহমুদ নামে আরেক টিকেটপ্রত্যাশী।
তিনি জানান, করোনার আগেই তিনি দেশে ফিরেছেন। তার ছুটি গত ১ জুন শেষও হয়েছে। কিন্তু তিনি ফ্লাইট চালুর খবরের অপেক্ষায় ছিলেন। গত পাঁচ দিন ধরে এই জার্মান প্রবাসী কাতার এয়ারওয়েজের অফিসে ফোন করছেন। কিন্তু কোনো প্রকার সাড়া পাননি তাদের কাছ থেকে।
তার মতে, তিনি যদি এই সময়ে জার্মানিতে পৌঁছতে না পারেন, তবে চাকরি হারাবেন। তবে সেলিম মাহমুদকে জানানো হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বলায় অফিস বন্ধ রেখেছেন।

আবার কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ বলছেন, আগামী ১৭ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত সব ফ্লাইটের সিটের বুকিং শেষ। এরপরের টিকেটের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেবেন তারা। তবে কবে সেই তারিখ আসবে তার জন্য এখন বসে থাকতে হবে ইউরোপগামী এ মানুষদের।
প্রবাসী শামীম ও সেলিম টিকেট না পাওয়ার ভোগান্তিতে পড়লেও জাহাঙ্গীর আলম পড়েছেন ভিন্ন রকম ঝামেলায়। গত ১০ ফেব্রæয়ারি তিনি ইতালির রোম থেকে ফেরেন। আগামী ২২ জুন ফেরত যাওয়ার জন্য তার রিটার্ন টিকেটও কেনা রয়েছে।
কিন্তু মঙ্গলবার কাতার এয়ারওয়েজের অফিসে গেলে তারা সাফ জানিয়ে দেয়, তিনি সেই রিটার্ন টিকেটে ফিরতে পারবেন না। তাকে নতুনভাবে আবারও টিকেট কাটতে হবে। তাকে রিটার্ন টিকেটের জন্য আবারও আবেদন করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাতার এয়ারওয়েজকে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বেবিচক। এই অনুমতি পাওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে কাতার এয়ারওয়েজের অফিসে টিকেটপ্রত্যাশীদের ভিড় বেড়েছে। অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার ভোর থেকে কাতার এয়ারওয়েজের কার্যালয়ের বাইরে টিকেটের জন্য অনেকে দাঁড়ান কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই টিকেট পাননি। আর এসব মানুষের বেশিরভাগই ইউরোপ যাওয়ার জন্য টিকেট খুঁজছিলেন। তারা সরাসরি ইউরোপ যেতে পারবেন না। তাদের প্রথমে কাতার যেতে হবে। কিন্তু তারা দোহায় প্রবেশ করতে পারবেন না। দোহায় বাংলাদেশিদের প্রবেশে বাধা থাকলেও তারা ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে পারবেন।
প্রবাসীদের এসব সমস্যার বিষয়ে কথা বলতে কাতার এয়ারওয়েজের বিভিন্ন হটলাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট। গতকাল ১৬ জুন থেকে লন্ডন-কাতার রুটে বিমান চলাচলের ওপর অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে ২৭৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট। এই ফ্লাইটে অধিকাংশই ইউরোপের যাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।
বেবিচক জানিয়েছে, ফ্লাইটটি ছাড়ার আগে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন বেবিচকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সোমবার মধ্যরাতে দোহা থেকে ৩৩ জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে। ভোর পৌনে ৪টায় ঢাকা ত্যাগের কথা থাকলেও প্রায় ঘণ্টাখানেক বিলম্বে ৪টা ৩৯ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়ে। স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে ফ্লাইটটি দোহায় পৌঁছায়।
কাতার এয়ারওয়েজ সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৮০০ প্রবাসী দেশ ছাড়তে পারবেন। তবে এখনও অর্ধ লক্ষাধিক প্রবাসী কাজে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু হলো। কোভিড-১৯ এর কারণে যাত্রীদের সুরক্ষায় যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে যাত্রী থেকে শুরু করে এই খাতের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

Originally posted 2020-06-17 05:23:43.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *