জমে উঠেছে করোনা-বাংলাদেশ লড়াই : কে জিতবে?

বাংলাদেশ এবং করোনার মধ্যে যুদ্ধটা ভালোই জমে উঠেছে। যেদিন বাংলাদেশ করোনাকে চ্যালেঞ্জ করে সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলো, সেদিনই করোনা চোখ রাঙালো। একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হলো।

এর ফলে করোনা জানিয়ে দিয়েছে যে, এটা ক্ষুদ্র ভাইরাস হতে পারে, কিন্তু এত সহজে সে হেরে যাওয়ার পাত্র নয়। আর সাথে এটাও জানান দিলো যে, সামনে কঠিন সময় আসছে।

বাংলাদেশ এবং করোনার এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। এই লড়াইয়ে যেই জিতুক না কেন, লড়াইয়ে যে শিকার হবে অনেক মানুষ এবং ভোগান্তি পোহাবে সাধারণ মানুষ তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত ৮ মার্চ থেকে। এরপর করোনার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশ। করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়ার সাথে সাথেই সভা-সমাবেশ সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়, বাতিল করা হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকল অনুষ্ঠান। ২৬ মার্চ থেকে করোনা মোকাবেলার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং প্রায় ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর অধৈর্য্য হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ এবং সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশ্য করোনাকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া শুরু করেছিল বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই।

করোনা সংক্রমণের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার ১ মাস যেতে না যেতেই অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে সবকিছু খুলে দিতে শুরু করে। ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয় গার্মেন্টস খুলে দেয়া, এরপর ঈদ উপলক্ষ্যে দোকানপাট-শপিং মল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর থেকেই করোনা যেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশে এখন ৪০ হাজারের বেশি ছাড়িয়েছে শনাক্তের সংখ্যা। বাংলাদেশের সামনের দিনগুলো আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে এবং জ্যামিতিক হারে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতি ৫ জনে ১ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ খুব শীঘ্রই হার্ড ইমিউনিটির দিকে যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশও কম যায় না। বাংলাদেশ করোনার সাথে বসবাসের এবং করোনাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানানোর নীতি গ্রহণ করেছে।

অষ্টম দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর পর বাংলাদেশ মনে করেছে আর নয়, করোনার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করতে হবে, দেখি কে বাঁচে। আর এজন্যেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৩০ মে’র পর আর ছুটি না বাড়ানোর এবং অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে সরকার সবকিছু সচল করে দিয়েছে।

যার ফলে কোভিড-১৯ যেন একটু ‘অপমানিত’ বোধ করেছে আর এই অপমানের জবাব দিলো সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্তের রেকর্ড দিয়ে। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই আছে। দেশে করোনার সংখ্যা যদি অনেক বাড়ে, তাতেও কোনকিছু যায় আসবে না, যদি না মৃত্যুর হার বাড়ে এবং মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা না বাড়ে। তবে কতদিন এরকম পরিস্থিতি থাকবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

দেখতে দেখতে করোনায় মারা গেছে ৫৫৯ জন, উপসর্গ নিয়ে যারা মারা গেছে তাদেরকে গণনায় ধরা হয়নি। কাজেই করোনার চোখ রাঙানি বন্ধ হওয়ার নয়, এমন মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর করোনার সাথে লড়াই করে জিততে হলে যা করতে হবে, তা হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই ছুটির সময় আমরা দেখেছি যে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ব্যাপার আমাদের অনেকটাই আপত্তি রয়েছে। আমরা যেন বিষয়গুলোকে মানতে চাই না। শুরু থেকেই করোনাকে উপেক্ষা করার একটি প্রবণতা আমাদের মধ্যে ছিল।

দেখা গেছে যে কারণে-অকারণে দোকান-পাটে যাওয়া, বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় ভিড় করা ইত্যাদি সহ মানুষ যেন করোনাকে পাত্তাই দিতে চাচ্ছে না। আর করোনাকে যারা পাত্তা দেয়নি, যারা করোনাকে উপেক্ষা করেছে, করোনা তাদের উপর ভয়ঙ্কর রূপে এসেছে, তাণ্ডব দেখিয়েছে। স্পেন এবং ইতালি তার সবথেকে বড় প্রমাণ। বাংলাদেশেও সেই পরিস্থিতি হবে কিনা তা বোঝা যাবে অচিরেই।

করোনার সাথে এই যুদ্ধে বাংলাদেশকে যে মুল্য দিতে হবে সেই মূল্য কতটা গভীর তা সম্ভবত এখনো আমরা বুঝতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত যদি আমরা করোনার সঙ্গে সহাবস্থানের সিদ্ধান্ত নেই সেটাও কম বিপদজনক হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে বাংলাদেশই বোধ হয় বিশ্বে প্রথম দেশ যারা করোনাকে পাত্তা না দিয়ে পিক সিজনে সবকিছু খুলে দিয়ে করোনাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। আর সাহস সবসময় ভালো, তবে অতি সাহস মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর হয়ে যেতে পারে।

Originally posted 2020-05-30 18:08:10.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *