ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে বিপর্যস্ত ভারতের দুই রাজ্য, নিহত ৫

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছে ভারতের ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বালেশ্বর এলাকা। ইয়াসের আঘাতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওড়িশায় দুই জন এবং পশ্চিমবঙ্গে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর, স্থাপনা, গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে।

বুধবার সকালে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে উড়িষ্যায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টি। আঘাত হানার পর প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায় বালেশ্বর, ভদ্রক, জগদীশপুরসহ অসংখ্য অঞ্চলে। ইয়াসের আঁচ পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুরেও। ঝড়ের আঘাতের পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা। উড়িষ্যায় ৫ লাখ ৮০ হাজার এবং পশ্চিমবঙ্গে ১৫ লাখ মানুষকে উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ কারণে প্রাণহানি ঘটেনি তেমন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, তার রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১ কোটি মানুষ। শুক্রবার ও শনিবার হেলিকপ্টারে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত ৩ জেলা পরিদর্শন করবেন তিনি।

তিনি বলেছেন, তিন দিনের আগে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেওয়া যাবে না। মমতা বলেন, ‘১৫ লাখ মানুষকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে পেরেছি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৫টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ঝড় থেমে গেলেও এখনো বড় বিপদ আছে। সেটি হলো নদী ও গঙ্গায় জোয়ার। নদী ও গঙ্গার পানি প্রায় ৫ ফুট উঁচু হতে পারে।’

মমতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দিঘা, নন্দীগ্রাম, সাগর, কুলপি, মিনাখাঁ, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালিসহ অনেক জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবাই এই বিপর্যয়ের কাজে ব্যস্ত। তাই ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারছি না। আগে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হবে, তারপর সবকিছু। সুন্দরবন এলাকায় অনেক বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অন্য এলাকায়ও কিছু বাঁধ ভেঙে গেছে, পানি ঢুকেছে অসংখ্য গ্রামে।’

মমতা ব্যানার্জি তার মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নন্দীগ্রাম ও সোনাচূড়ায় অনেক কিছু ভেসে গেছে। সাগরদ্বীপে কপিলমুনি আশ্রমে জল ঢুকেছে। বাঁধ ভেঙে গেছে। সুন্দরবন ও দিঘায় বিদ্যুতের ক্ষতি হয়েছে।’

মমতা বলেন, ‘আম্ফানে কয়েক হাজার কোটি টাকার জিনিস নষ্ট হয়েছিল। এবার আমরা অতিসতর্ক ছিলাম বলেই বড় ঘটনা ঘটেনি।’ এদিকে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরে বাঁক নেওয়ার সময় শক্তি ক্ষয় হয়। তাতেই ঝড়ের গতি কমে যায়।

বাঁধ উপচে প্লাবিত সুন্দরবন :ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে এবং বৃষ্টির জেরে সুন্দরবনের উপকূল এলাকার নদীতে ব্যাপক জলস্ফীতি। একাধিক জায়গায় বাঁধ টপকে পানি ঢুকে প্লাবিত হলো সুন্দরবনের গ্রামের পর গ্রাম। ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছে কুলতলীর মৈপীঠেও। স্রোতের তোড়ে ভেঙে পড়ছে মাটির বাড়ি।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্ধারকাজে নামে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীসহ সিভিল প্রশাসন। আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া থেকে নদীর বাঁধ মেরামতে হাত লাগিয়েছে তারা। এদিকে ভরাকটাল আর ইয়াসের প্রভাবে জলস্ফীতি হয়েছে গঙ্গায়। সমুদ্রের সঙ্গে ফুলেফেঁপে উঠেছে গঙ্গার পানিও। বুধবার সকালে একাধিক জায়গায় গঙ্গার পাড় টপকে পানি ঢুকে পড়েছে সমতলে। পানি ঢুকে উত্তরপাড়ার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। পানি ঢুকে যায় বহুসংখ্যক বাড়িতে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শত শত পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Originally posted 2021-05-27 05:05:33.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *