
কে হচ্ছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি?

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) পদোন্নতি দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে বদলি করায় শূন্য হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই পদ। তবে একটি পদের জন্যই তলে তলে বেশ কয়েক কর্মকর্তা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা ওই পদে নিজেদের যোগ্য হিসেবে তুলে ধরে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নানাভাবে ধরনা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অনেকে পুলিশ সদরদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
পুলিশের ৮টি রেঞ্জের মধ্যে নানা কারণেই ঢাকা রেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজধানীর আশপাশের ১৩টি জেলা নিয়ে এই রেঞ্জের কার্যক্রম হওয়ায় সব সময়েই সরকারের আস্থাভাজন এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানায়, এবারও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি পদে সরকারের আস্থাভাজন, চৌকস এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমানকে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপির চলতি দায়িত্ব দিয়ে বদলি করা হয়েছে। তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর পদটি খালি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিআইজি হাবিবুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে পুলিশের অন্য ইউনিটে পদায়নের বিষয়টি বেশ কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় ছিল। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি পদে কে আসবেন—চলছিল সে আলোচনাও। এর মধ্যেই আগ্রহী ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশের বেশ কয়েক কর্মকর্তা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তবে এর বাইরে এখন পর্যন্ত ওই পদের জন্য ডিআইজি মর্যাদার ছয় কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা সরকারের গুডবুকেও রয়েছেন।
এই কর্মকর্তারা হলেন—ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন এবং খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ওই পাঁচ কর্মকর্তার মধ্য থেকেই একজনকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে বেছে নেওয়া হতে পারে। তবে শেষ সময়ে এর বাইরে থেকেও আসতে পারে কারো নাম।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এর আগে এই কর্মকর্তা একই ইউনিটে অতিরিক্ত ডিআইজির দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময়ে তিনি থানাগুলোতে সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি কমাতে নানা উদ্যোগ নেন। পরে তার এই উদ্যোগ পুলিশ বিভাগ মডেল হিসেবে নিয়ে তা নানা ইউনিটের প্রয়োগ করে। এ ছাড়া তিনি ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরবর্তী পরিস্থিতিতে জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ওই সময়ে তিনি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন।
এদিকে পুলিশ ক্যাডারের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নামও জোরেশোরে আলোচনায় রয়েছে। সরকারের আস্থাভাজন এই পুলিশ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ডিএমপির ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন।
আলোচনায় থাকা ১৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা এ কে এম হাফিজ আক্তার ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ডিএমপির গুলশান ও উত্তরা বিভাগ, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এবং পুলিশ সদরদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি পদে আলোচনায় থাকা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ডিএমপির ডিসি ও যুগ্ম কমিশনার ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বর্তমানে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্ব পালন করলেও তিনি এর আগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগের ডিসি, ডিএমপি সদরদপ্তর এবং পুলিশ সদরদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে ছিলেন।
একই ব্যাচের কর্মকর্তা ড. খ. মহিদ উদ্দিন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি পদে দায়িত্ব পালনের আগে ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগ এবং পুলিশ সদরদপ্তরে দায়িত্ব সামলেছেন।
এই ছয় কর্মকর্তার মধ্যে দুজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, সরকারি চাকরি হিসেবে যেখানে বদলি করা হবে, তারা সেখানেই দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত থাকেন। তবে নানা কারণেই ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি পদে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের কর্মকর্তাদের জন্য মর্যাদার। এজন্য সবাই এই রেঞ্জে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী।