এবার বড় বেকায়দায় পড়েছেন দেশের পোশাক শ্রমিকরা

গার্মেন্ট কারখানার চাকরিও যেন সোনার হরিণ। এরমধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাবে আরও বেকায়দায় পড়েছেন পোশাক শ্রমিকরা। যেসব শ্রমিক বাড়ি চলে গেছেন, বা যাচ্ছেন তারা হয়তো নিজের কর্মস্থলে আর যোগ দিতে পারবেন না। বাড়িতে যাওয়া শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিকল্প চিন্তা করতে হবে। গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কর্মস্থল এলাকা ছেড়ে চলে না যাওয়ার জন্য সব শ্রমিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের বলা হয়েছে, ঈদের ছুটিতে যেন কেউ বাড়িতে চলে না যান। এ ব্যাপারে সরকারেরও নির্দেশনা আছে। কাজেই যারা এই নির্দেশ মানবে না, তারা আর আগের কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবেন না। তারা চাকরি হারাবেন।’ তিনি বলেন, ‘যেসব শ্রমিক ইতোমধ্যে বাড়ি চলে গেছেন, বা যাচ্ছেন, তারা আর এই সেক্টরে চাকরি পাবেন না। ঈদের পর চালু থাকা অধিকাংশ কারখানা ৫ থেকে ১০ শতাংশ, বা কোনও কোনও কারখানা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রমিক ছাঁটাই করবে। আর যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব কারখানার শ্রমিকরা ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন।’

মোহাম্মদ হাতেম জানান, সরকারের নির্দেশে আমরা এপ্রিল ও মে— এই দুই মাস শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিয়েছি। কিন্তু কোনও মালিকই সারা বছর বসিয়ে বসিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেবে না। কাজেই যেসব কারখানা ক্রয় আদেশ পাচ্ছে না, তারা শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হবেন।

মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, যেসব শ্রমিক নির্দেশনা অমান্য করে ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন, তারা চাকরি হারাবেন। নাম প্রকাশ না করে বিজিএমইএ’র এক নেতা বলেন, ‘শ্রমিকদের ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। কাজেই যেসব শ্রমিক কর্মস্থল এলাকায় থাকবে, কেবল তারাই চাকরিতে থাকতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদ-উল ইসলাম খান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে কোনও শ্রমিক বাড়ি গেলে কেন তিনি ফিরে এসে যোগ দিতে পারবে না। এটা কোনও মগের মুল্লুক নয়।’

তিনি বলেন, ‘একদিন পর ঈদ, অথচ এখনও প্রায় ৩০ শতাংশ শ্রমিক বেতন-বোনাস পাননি। শ্রমিকরা এখনও রাস্তায় রয়েছেন। বেতন- বোনাসের জন্য তারা এখনও আন্দোলন করছেন।’

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সিপিডি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যেন কারখানাগুলো শ্রমিকদের ন্যূনতম আয় নিরাপত্তা দেয়। তাদের যেন ছাঁটাই না করে। তবে যেসব কারখানা ক্রয় আদেশ পাচ্ছে না, তারা হয়তো বাধ্য হয়েই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে। তিনি বলেন, ‘চাহিদা এবং সরবরাহ দু’দিক থেকেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রধান ক্রেতা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লম্বা সময় ধরে ওই সব দেশে চলছে লকডাউন। ওই দেশগুলোর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এই প্রবণতা থাকতে পারে।’

করোনাভাইরাসের কারণে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রফতানিমুখী ৩৪৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এরমধ্যে ৭১টি বিকেএমইএ’র সদস্য। বাকিগুলো বিজিএমইএ’র সদস্য। কারখানাগুলো গত দুই মাসে বন্ধ হয়েছে। তবে সবই স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়নি। জানা যায়, বন্ধ হওয়া বিজিএমইএ’র সদস্য ৩৪৮টি কারখানার মধ্যে ২৬৮টি ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৮০টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৪০টি, আশুলিয়া-সাভারে ৭৯টি, গাজীপুরে ৯২টি, নারায়ণগঞ্জে ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৬৭টি রয়েছে।

প্রায় সাড়ে ৩০০ কারখানা বন্ধ হওয়ায় বিজিএমইএ’র সচল কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ২৭৪ থেকে কমে এক হাজার ৯২৬টিতে দাঁড়িয়েছে। বিজিএমইএ’র মোট সদস্য কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৬২১টি।

করোনার কারণে এখনও পর্যন্ত বিজিএমইএ’র সদস্য কারখানার ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার (৩৫০ কোটি টাকা) মূল্যের আদেশ বাতিল অথবা স্থগিত হয়েছে। এছাড়া, বিকেএমইএ’র আরও প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের আদেশ বাতিল হয়েছে। তবে এরমধ্যেও এক বিলিয়ন ডলারের (১০০ কোটি) রফতানি আদেশ ফিরে এসেছে।

অনেক জায়গায় শ্রমিকদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় বেশ কিছু কারখানার ঘাটতি আছে। এর ফলে ব্র্যান্ড, বায়াররা কারখানার কর্ম পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তাদের ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় বাতিল করতে পারে ক্রয় আদেশ।

Originally posted 2020-05-26 10:01:47.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *