এক বাড়িওয়ালাই মওকুফ করেছেন ১১ লাখ টাকা বাড়িভাড়া

করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪ পরিবারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইতালিপ্রবাসী ব্যবসায়ী মনোয়ার ক্লার্ক।

সম্প্রতি তার ঢাকার বাড়ির ২৪টি ভাড়াটিয়ার দুই মাসের বাসাভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষের আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় ধানমন্ডির বাড়ির ২৪টি পরিবারের এপ্রিল ও মে মাসের ভাড়া মওকুফ করে দিয়ে মানবতার পরিচয় দিলেন ভেনিস প্রবাসী মনোয়ার।

জানা গেছে, রাজধানীর পূর্ব ধানমন্ডিতে নিজস্ব বাড়িটিতে ২৪টি পরিবার ভাড়া থাকেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে পরিবারগুলোর সমস্যা দেখা দেয়।

এ প্রসঙ্গে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুল ইসলাম জানান, ২৪টি ফ্লাট থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ভাড়া আসে। দুই মাসে ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের জন্য এই পুরো টাকা মওকুফ করে দিয়েছেন বাড়ির মালিক।

তিনি আরও জানান, মনোয়ার হোসেন ইতালির ভেনিসে বসবাস করছেন। দেশটিতে করোনার ভয়াবহতা দেখার পর দেশের পরিস্থিতি নিয়েও তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। মানুষের কষ্ট হচ্ছে জেনে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নেন।

মনোয়ার ক্লার্কের বাড়িতে ভাড়া থাকা একজন হলেন ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের বাড়িওয়ালা প্রবাসে থাকেন। তিনি খুব ভালো মানুষ। করোনার সমস্যার মধ্যে তিনি আমাদের অনেক সুবিধা দিয়েছেন। তা না হলে আমাদের কষ্ট হয়ে যেত।

অন্য আরেক ভাড়াটিয়া বেসরকারি চাকরিজীবী ইশতিয়াক আহমেদ ইশা বলেন, আমাদের বর্তমান কোনো আয় নাই। বেতনও নেই। জমানো টাকা ভেঙে ভেঙে খাচ্ছি। এমন বিপদের সময়ে তিনি যে, ছাড় দিয়েছেন এতে অনেক বড় উপকার হয়েছে। তার মতো ঢাকার অন্যান্য ধনী বাড়ির মালিকদেরকেও বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।

এ ব্যাপারে মনোয়ার ক্লার্ক বলেন, এই মহামারিতে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিভেদ ভুলে গিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো অর্থশালী বিত্তশালীদের উচিত এগিয়ে আসা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী। প্রবাসীরা বিদেশে পরিশ্রম করে উপার্জন করে দেশের জন্য।

তিনি বলেন, প্রবাসীদের নিয়ে অনেকেই কটাক্ষ করে কথা বলেন। এরপরেও প্রবাসীরা দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যাবে। দেশের অসুবিধায় পাশে থাকবে কারণ বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।

তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ যদি কষ্টে থাকে, বিশেষ করে যারা আমার প্রতিবেশী। তারা যদি কষ্টে থাকে তাহলে নিজের কাছে একটু খারাপ লাগে। যদিও ইতালিতে করোনায় আমরা সমস্যায় আছি ও ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরও বাংলাদেশে কিছুটা উপকার করতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি প্রতিবেশীদের পাশে থাকার জন্য।

মনোয়ার ক্লার্কের জন্ম ঢাকাতেই। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার মাচিমপুরে। তিনি ইতালি বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

Originally posted 2020-05-31 08:19:19.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *