করোনার একাধিক হটস্পট নিয়ে উদ্বেগে ডব্লিউএইচও

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে শুরুর পর প্রথমে এর হটস্পট ছিল মূলত চীন। এর পর ক্রমেই যখন এ প্রাণঘাতী ভাইরাস বিশ্বে ছড়াতে শুরু করল তখন চীনকে পেছনে ফেলে করোনার নতুন হটস্পট হয়ে ওঠে ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের দেশগুলো। এ অঞ্চল যখন প্রতিদিন কয়েক হাজার করে প্রাণহানিতে বিপর্যস্ত তখন ইউরোপকে ছাড়িয়ে করোনার নয়া কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র।

এর পর থেকে এখনো যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্ত ও মৃত্যুতে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে আছে। তবে ইউরোপে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে এলেও ক্রমেই আরও কিছু দেশ করোনার নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ল্যাটিন আমেরিকায় ব্রাজিল, ইউরোপে রাশিয়া, আফ্রিকায় মিসর ও এশিয়ায় ভারতকে করোনার নয়া হটস্পট বিবেচনা করা হচ্ছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

গত বৃহস্পতিবার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডব্লিউএইচও মুখপাত্র মারিয়া ভ্যান কেরখোভে বলেন, আমরা রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে সংক্রমণ সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার দিকে নজর রাখছি। কারণ ভাইরাসটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়ায়। এ ছাড়া আমরা দেখেছি এ ভাইরাস কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে। তাই গোটা বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

যেভাবে গবেষণা চলছে তাতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ করোনার টিকা তৈরি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ডা. কেরখোভে। তিনি জানান, বর্তমানে একশর বেশি সম্ভাব্য

টিকা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সুরক্ষা ও কার্যকারিতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষার পরই এগুলো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে চলমান করোনা মহামারী নিয়ে আবারও বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। ফক্স নিউজ জানায়, গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এত অগ্রগতির পরও বর্তমানে বিশ্বে করোনা ভাইরাসের মতো এক নগণ্য জীবাণুর কারণে সংকটের মধ্যে আছে। তাই এখনি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে মহামারী বিশ্বজুড়ে অকল্পনীয় যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

গুতেরেজ আরও বলেন, এই মহামারীতে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ আসন্ন। প্রায় ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যের নিম্নসীমায় চলে যেতে পারে। বেকার হয়ে যেতে পারে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ। এক দশমিক ছয় বিলিয়ন মানুষ জীবিকা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে। ১৯৩০ সালের পর এই প্রথম বিশ^ এত খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। তাই এখনই সবাইকে আসন্ন এই মহামন্দা মোকাবিলায় সচেতন হতে হবে।

চলমান মহামারী নিয়ে মারাত্মক আশঙ্কার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফও। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর জেরে যে অর্থনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ২০২০ সালের শেষে আরও সাড়ে আট কোটির বেশি শিশুকে দারিদ্র্যের সম্মুখীন হতে হবে। সে ক্ষেত্রে কম ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে জাতীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা শিশুর সংখ্যা ৬৭ কোটি পার করবে। এই শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশই সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে আফ্রিকার দেশগুলো এবং দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দা।

Originally posted 2020-05-30 08:20:13.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *