করোনার আঘাত দরিদ্র দেশগুলো কীভাবে মোকাবেলা করবে?

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সক্ষমতা সীমিতই বলা চলে। তাদের দুর্ভোগে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকি আছে। প্রাথমিক হিসাব বলছে, এই বিপর্যয় বৈশ্বিক দারিদ্র বাড়াতে অবদান রাখবে। এতে দরিদ্র ও ক্ষুধা অন্তত দুই শতাংশ বেড়ে যেতে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপ, নীতি ও সমন্বিত চেষ্টায় এই সংকট কমিয়ে আনতে পারে দরিদ্র দেশগুলো। যেমন—

বাণিজ্য উন্মুক্ত রাখা

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে রফতানি করা ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ পণ্য দশটি বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে আসছে। আর এসব মার্কেট কোনোটি মাঝারি আবার কোনোটি তীব্রভাবে কোভিড-১৯ সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত। বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো বড় ধরনের বাণিজ্য রাজস্ব হারাবে।

এতে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১১টি অর্জন করে রফতানি দ্বিগুণ করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। চীন থেকে আসা কাঁচা মালের ঘাটতিতে সরবরাহ ধারা ব্যাহত হবে। যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রভাব ফেলবে। এসব সমস্যার সমাধানে বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া আরও অনেক পথ খোলা রয়েছে।

কেবল চিকিৎসা রসদের জন্যই বাণিজ্য উন্মুক্ত রাখলে চলবে না, খাদ্য, কাঁচামালা ও জ্বালানি সরবরাহও অবাধ রাখতে হবে। কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই বাণিজ্য, পরিবহন ও ট্র্যানজিট সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। এলডিসিসহ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাত সদস্য দেশের মন্ত্রীদের যৌথ বৈঠকের পর দেয়া বিবৃতি অনুসারে এই নীতি মেনে চলতে হবে।

এলডিসি দেশগুলোকে যৌথভাবে এসব উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে। সীমান্তে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মুখোমুখি হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনতে হবে।

বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা বাড়াতে হবে

সম্প্রতি বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের কনফারেন্স(ইউএনসিটিএডি) দেখিয়েছে, করোনাভাইরাস কখন নিয়ন্ত্রণে আসে তার ওপর নির্ভর করে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ ১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। এটা চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে উপত্তা দেয়া হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ বিপরীতি। সেখানে ২০২০-২০২১ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

এই অবনতি নিশ্চিতভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আঘাত হানবে। যেখানে উৎপাদন, খনিজ ও জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হয়েছে। সবখাতই চাহিদা ও যোগানের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিনিয়োগে অপরিহার্য বিপর্যয়ের পরেও এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অন্তত পাঁচটি অর্জনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করা। এতে এলডিসি দেশগুলোর সরকারের বিনিয়োগ পরিগ্রহণ ও বাস্তবায়নের চিত্র ফুটে উঠে, যাতে অতিপ্রয়োজনীয় বিনিয়োগ প্রবাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়।

বানিজ্য প্রবাহ অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা বৃদ্ধি

যদিও বাণিজ্য উদ্যোগে সহযোগিতার প্রভাব নিয়ে ভবিষ্যাদ্বাণী একটু আগেভাগেই করা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোভিড-১৯ রোগ মোকাবেলায় উন্নয়ন সম্পদ খরচ হয়ে যাওয়ায় তাতে ঘাটতি পড়ে যেতে পারে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দরিদ্র লাঘবে এটা সঞ্জীবনীর ভূমিকা রাখে।

প্রতিটি দাতা দেশের মোট জাতীয় আয়ের(জিএনআই) সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বাণিজ্যের জন্য সাহায্য, যেটা আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতার অংশ। কাজেই জিএনআই কমে গেলে তাতে বাণিজ্যের জন্য সাহায্যেও প্রভাব ফেলবে।

এসব প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্যভাবে বাণিজ্যের জন্য সাহায্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষত ঘুচিয়ে দিতে সহায়ক হবে। সেক্ষেত্রে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোকে বাধাগ্রস্ত না করে সহযোগিতা করা উচিত হবে।

সম্ভাব্য ই-বাণিজ্য

এই সংকটের মুহূর্তে ই-বাণিজ্য হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। সরাসরি কেনাবেচার দোকানগুলো যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, লোকজন জনসমাগম এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং নগদ লেনদেনে যাচ্ছেন না, তখন ই-কমার্সে গুরুত্ব দেয়ায়ই যথাযথ সিদ্ধান্ত হতে পারে। এলডিসির সরকারগুলো তাদের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এই সংকট মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকেও সেভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

নিরাপত্তা নীতি বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনা

বেশ কিছু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ ইতিমধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। করোনাকাল ও তার পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে ধরে রাখা একং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পদ হস্তান্তর ও রাজস্বনীতি শিথিল করে মুদ্রানীতির মাধ্যমে এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে।

এরকম পদক্ষেপ গ্রহণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সক্ষমতা না থাকলেও তাদের উচিত হবে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগসহ কোম্পানিগুলোকে স্বস্তি দিতে নিরাপত্তা কলাকৌশল বাস্তবায়নের সুযোগ বেছে নেয়া। এছাড়া সমাজের দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলোকেও ছাড় দেয়ার বিষয়টি মাথায় নিতে হবে।

এলডিসি দেশগুলোর ঋণের বোঝা যাতে না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তাদের সহযোগিতার উপায়গুলো ব্যবহার করতে হবে।

দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অ্যাসোসিয়েশনের(আইডিএ) দেশগুলোর ঋণ বাতিলে পদক্ষেপের আহ্বানও এই সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এসব দেশে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ চরম দরিদ্রের মধ্যে বসবাস করছেন।

Originally posted 2020-05-28 13:04:39.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *