রাজধানীতে হঠাৎ বাসে আগুন দিল কারা?

রাজাধানীর বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ৯টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবার একটাই প্রশ্ন, বাসে আগুন দিল কারা?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারনা, ঢাকা-১৮ আসনে উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী কোনও পক্ষ নাশকতার উদ্দেশ্যে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটাতে পারে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, মতিঝিল, নয়াবাজার, ভাটারা, শাহজাহানপুরসহ ৯টি স্থানে ৯টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

এতগুলো বাসে আগুন দেওয়া হলো, কিন্তু কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি, যিনি আগুন দিতে দেখেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে পল্টন থানাধীন বিএনপি পার্টি অফিসের উত্তর পাশে কর অঞ্চল ১৫ পার্কিং করা সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর ১টার দিকে মতিঝিল থানাধীন মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে অগ্রণী ব্যাংকের স্টাফ বাসে, ১টা ২৫ মিনিটে রমনা হোটেলের সামনে চলতি গাড়ি ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে দেড়টার দিকে দেওয়ান পরিবহনে, ২টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ সচিবালয়ের উত্তর পাশে রজনীগন্ধা পরিবহন এবং বংশাল থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় ২টা ২৫ মিনিটে দিশারী পরিবহনে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া ২টা ৪৫ মিনিটে পল্টন থানাধীন পার্কলিং-এ জৈনপুরী পরিবহন, বিকেল ৩টায় মতিঝিল থানাধীন পুবালী পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন দোতলা বিআরটিসি বাসে এবং ভাটারা থানাধীন কোকাকোলা মোড়ে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

গত কয়েক বছর দেশে এভাবে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

হঠাৎ করে একের পর এক এভাবে গণপরিবহনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নগরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলছে তল্লাশী। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কে ঘন ঘন টহল পরিচালনা করছে থানা পুলিশের একাধিক টিম। একই সঙ্গে নগরজুড়ে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থেকে গণপরিবহনসহ যানবাহনগুলোর প্রতি নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সড়কের আশপাশের বিভিন্ন গলি ও শাখা সড়কে পুলিশের টহল বাড়াতে বলা হয়েছে। গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন যাতে সড়কের নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া না দাঁড়ায় সে বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে বিশেষ নজরদারি করতে বলা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিরাব (১২ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে এই আসনে ভোটগ্রহণ চলছিলো। তবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল্লাহপুরের মালেকা বানু স্কুলে ভোট কেন্দ্রের সামনে একাধিক ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ঢাকা-১৮ আসনে সংসদীয় উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী কোনও পক্ষ নাশকতার উদ্দেশ্যে একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকার দুটি স্থানে ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ও ভোট গ্রহণের সময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা এক কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাড়ানো হয়েছে। টহল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশীর জন্য পুলিশের চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বাজধানীর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। ”

তিনি বলেন, “তুরাগ থানা এলাকায় ককটেলসহ সোহেল মিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। রাজধানীজুড়ে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এরইমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ”

আব্দুল্লাহপুরের ভোট কেন্দ্রের সামনে ককটেল ছুড়ে পালানোর সময় স্থানীয়রা ৩ জনকে আটক করে পুলিশের হাতে দেয়। অন্যদিকে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকা থেকে মো. সোহেল মিয়া নামে একজনকে ককটেলসহ আটক করেছে পুলিশ।

ডিএমপি সূত্র জানায়, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক সোহেল জানায়, সুমন নামে বিএনপির এক নেতা তাকে ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মীদের লক্ষ্য করে ককটেল মারতে বলেন। এই কাজ করার জন্য তাকে টাকাও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, “আব্দুল্লাহপুর ও তুরাগ এলাকার দুটি স্থানে ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আব্দুল্লাহপুর থেকে ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এবং তুরাগ থেকে একজনকে ককটেলসহ আমরা আটক করেছি। একটি রাজনৈকিত দলের নির্দেশেই এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে। ”

ডিএমপির মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, “রাজধানীতে বাসে আগুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সড়কে যাতে কোনো বাস পার্কিং করা না থাকে সে জন্য নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া চালক ও হেলপারদের প্রতি বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ”বাংলানিউজ



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *