৫ উপায়ে এখনও দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে আরো ১ মাস থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকবে, তবে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে বিষয়ে কোন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্ষেপণ নেই। বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থতার সংখ্যাও বাড়ছে, সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

যদিও এখনো মৃত্যুর হার অনেক কম। তবুও করোনা সংক্রমণের এরকম লাগামহীন উর্ধ্বগতি বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে যেকোন সময় নাজুক এবং জটিল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এরকম বাস্তবতায় মনে করা হচ্ছে করোনার সংক্রমণকে সীমিত করার জন্য এখনই কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিকে এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা সম্ভব। যে কাজগুলো করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা তাঁর মধ্যে রয়েছে-

দ্রুত পরীক্ষা বাড়ানো বা র‍্যাপিড টেস্ট: বাংলাদেশে যেভাবে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে তাতে ২০ হাজার বা তাঁর থেকে বেশি হারে দৈনিক পরীক্ষা করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে ১৫ হাজারের আশেপাশে। তবুও অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, শুধু ২০ হাজার নয়, আরো বেশি সংখ্যক পরীক্ষা করা দরকার এবং এটা পিসিআর ল্যাবে সম্ভব নয়। কারণ কিছুদিনের মধ্যেই পিসিআর ল্যাবে কিটের সঙ্কট দেখা দিবে এবং ইতিমধ্যেই এখানে এক ধরণের টেস্ট জট সৃষ্টি হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘদিন। এই পরিস্থিতি কাটানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো র‍্যাপিড টেস্টের বিকল্প আমাদের কাছে নেই। যত বেশি পরীক্ষা করা যাবে, তত বেশি সংক্রমণের ঝুঁকি আমরা নিয়ন্ত্রিত করতে পারবো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সংক্রমিত এলাকা চিহ্নিত করা: বেশি পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের যে এলাকাগুলো বেশি সংক্রমিত সেই এলাকাগুলোকে আমরা চিহ্নিত করতে পারবো। সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সংক্রমিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমাদের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে, আমরা যদি বাংলাদেশের সংক্রমণের ধারাটি লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে যে, কিছু কিছু পকেট থেকে এই সংক্রমণগুলো ছড়িয়ে পড়ছে। এই এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা জরুরী। যদিও ১ সপ্তাহ ধরে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশকে এলাকাভিত্তিকভাবে লকডাউন করা হবে, কিন্তু এখনো এটা কার্যকর হয়নি। কাজেই সংক্রমিত এলাকাগুলোকে খুব দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে।

অতিসংক্রমিত ভৌগলিক এলাকাগুলো লকডাউন: অতিসংক্রমিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে সেই এলাকাগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে, সেখানে লকডাউন করার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ তাঁরা বলছেন যে, অতিসংক্রমিত এলাকার লোকজন সহজেই আক্রান্ত হবেন এবং তাঁরা অন্য এলাকায় গেলে সংক্রমণটি ছড়িয়ে পড়বে। এই বাস্তবতায় অতি সংক্রমিত ভৌগলিক এলাকাগুলোকে লকডাউন করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াত বন্ধ করা: করোনা সঙ্কট এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার কাজ এখন একসাথে করছে সরকার। এই কারণেই সরকারকে অর্থনীতি কর্মকাণ্ডগুলো চালু করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মানুষের চলাচল সীমিত হলেও এক এলাকার লোকজনকে অন্য এলাকায় যাওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ অসংক্রমিত এলাকার লোক সংক্রমিত এলাকায় গেলে বা সংক্রমিত এলাকার লোক অসংক্রমিত এলাকায় গেলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। এজন্য এক এলাকার লোকজনের অন্য এলাকায় চলাফেরা করা বন্ধ করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করতে হবে: এখনো সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করেনি। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও সরকারের পক্ষ থেকে শিথিলতার সঙ্গে সঙ্কট মোকাবেলার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এটা কার্যকর হচ্ছেনা। এখন সরকারকে কঠোরতা অবলম্বন করতেই হবে বলে মনে করছেন বিশেশজ্ঞরা। বিশেষ করে যারা বাইরে বের হচ্ছেন, মাস্ক ব্যবহার করছেন না, গণপরিবহনে যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না তাঁদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই পাঁচটি জিনিস মেনে আমরা করোনা পরিস্থিতিকে এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কারণ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এটা তাণ্ডব ছড়াতে পারছে না। কারণ এখনো বাংলাদেশে মৃত্যুর হার কম এবং সুস্থতার হার বেশি।

Originally posted 2020-06-20 20:28:25.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *