স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না গণপরিবহনে

বর্তমানে অন্যতম একটি স্লোগান হলো ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মৃত্যুঝুঁকি আছে’। করোনার কারণে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এটি করা হয়েছে। এ মৃত্যুঝুঁকি এখনো আছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বললেই চলে গণপরিবহনে। চালক, সহকারী, যাত্রী-কেউই মানছেন না প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি, পরছেন না মাস্ক।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহন পর্যবেক্ষণ করে একই চিত্র চোখে পড়ে। চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার রোগী শনাক্ত হয়। এরপর করোনার সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে দেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১ জুন থেকে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবারো গণপরিহন চলাচল শুরু করে।

শুরুর দিকে জনগণের মাঝে করোনা নিয়ে আতঙ্ক এবং প্রশাসনের অভিযানের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গণপরিবহন চলাচল করছিল। সে সময় বাসে দুই সিটে এক যাত্রী বসানো, মাস্ক ব্যবহার, বাসে ওঠানোর সময় যাত্রীদের হাত ও শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলা হচ্ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে অবস্থা বদলাতে থাকে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারো আগের মতো এক সিটে এক যাত্রী বসানো শুরু হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হয়।

বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ সময়ের পর্যবেক্ষণে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা যায়নি। অথচ বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলার কথা। এ অবস্থার কারণ জানতে চাইলে বিকাশ পরিবহনের একটি গাড়ির চালকের সহকারী বলেন, বোতল আছে কিন্তু স্প্রে করা হয় না। বোতলে জীবাণুনাশক আছে কি না, জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেয়নি। বেশির ভাগ গাড়িতে দেখা যায় চালকের সহকারী গেটেই দাঁড়িয়ে থাকেন। যাত্রীরা একজনের সঙ্গে আরেকজন গাদাগাদি করে ওঠেন। এমন অসচেতনতার সম্পর্কে জানতে চাইলে যাত্রীরা বলেন, চলন্ত অবস্থাতেই আমাদের গাড়িতে উঠতে হয়। করোনার ঝুঁকি আছে জেনেও এভাবেই উঠতে হচ্ছে।

এমন অনিয়মে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, জানতে চাইলে মফিজুল ইসলাম নামের এক ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, ড্রাইভার-হেলপাররা মাস্ক না পরলে আমরা মামলা দিয়ে জরিমানা করছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হচ্ছে। তবে প্রতিটি গাড়ি আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব হয় না। জরিমানার কথা জেনেও অনেকে মাস্ক পরেন না। কিন্তু যাত্রীদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। এটা যার যার সচেতনতার বিষয়। যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ বছর শীতে বিয়ে, পিকনিকসহ জনসমাগম হয়-এমন অনুষ্ঠান আয়োজন না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে প্রতিদিনের যে জনসমাগম, সবচেয়ে বেশি মানুষের পদচারণ যে গণপরিহনে, সেখানেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. আতিকুর রহমান বলেন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং হচ্ছে করোনা রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
রোগী কার কার সংস্পর্শে গেলেন, এটা বের করা গেলেই সম্ভাব্য রোগীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে চলাচল এতটাই অনিয়ন্ত্রিত যে একজন মানুষেরও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করার সুযোগ নেই। এটার সুদূরপ্রসারী ফলাফল হবে ভয়াবহ।

বিশেষ করে যখন ভ্যাকসিন চলে আসবে, তখন সবাইকে একসঙ্গে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে না। কার সংস্পর্শে কে এল, সেটাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এটা অনেক বড় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *