লাদাখ সংঘাতে ভারতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র; বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে।এবং একই সঙ্গে লাদাখ সংঘাতে মার্কিন প্রশাসন ভারতের পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই সঙ্গে ভারত-চীন সংঘাতের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ওপর আরও চাপ বাড়ালো অ্যামেরিকা। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে এসবেরই ইঙ্গিত দেন।তিনি বলেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা অসম্ভব নয়। এবং অ্যামেরিকা সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞের মতে, কোনো দেশ কোনো এক বা একাধিক পণ্য আমদানির উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলিও পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের জের ধরে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের আকার নিতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেই সহজ হবে না৷
১৯৩০-এর দশকে শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা বিশাল মন্দা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার সে বছর শুল্ক সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর করার ফলে ২০ হাজারেরও বেশি পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হয়েছিল৷ ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও দেশের জন্য শুল্ক চাপানো হচ্ছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তোপ দেগে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে সমালোচকদের মতে, এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তিনি অ্যামেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না৷ কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে৷ ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করলে বাকি দেশগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না৷ ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যামেরিকার বিরুদ্ধেও পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেয়ে বহুপাক্ষিক সমাধানসূত্রের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা৷
সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প যদি সত্যি আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপান, তার পরিণতি অ্যামেরিকার জন্যও ইতিবাচক হবে না৷ যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে অ্যামেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে৷ তার ফলে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে৷ যে কোম্পানিগুলি ইস্পাত ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে, তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে৷
অ্যামেরিকায় ইস্পাত রপ্তানি করতে না পারলে চীন ইউরোপের বাজারে তা আরও সস্তায় বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে৷ স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে এমন আরও দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে৷ সামগ্রিকভাবে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা নানাভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক নানা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে এমন বিপদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাব্লিইউটিও সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বাণিজ্যের বিধিনিয়ম স্থির করে এসেছে এবং বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে৷ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে৷ সব পক্ষ ডাব্লিইউটিও-র রায় না মানলে এই সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ এমন কাঠামো তার কার্যকারিতা হারালে ভবিষ্যতে সেই ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না৷
গত প্রায় দেড় মাস ধরে লাগাতার চীনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ট্রাম্প। একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, চীনের উহান প্রদেশের একটি ল্যাব থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস যে ভাবে ছড়িয়েছে, তার জন্যও চীনকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর মতে, চাইলে চীন এই ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে পারতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের হয়ে কাজ করছে, এই অভিযোগ তুলে তাদের ফান্ড বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতেই কিছু দিন আগে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অ্যামেরিকার সংস্থাগুলিকে চীনের থেকে জিনিসপত্র আমদানি বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কিন্তু বাস্তবে কি তা সম্ভব? মার্কিন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ এবং ট্রাম্প সরকারের পরামর্শদাতা রবার্ট লাইটহাইজার সম্প্রতি কংগ্রেস প্রতিনিধিদের বলেছেন, অ্যামেরিকা এবং চীন বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে ভাবে সম্পর্কযুক্ত, তাতে চাইলেই দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়।
লাইটহাইজারের এই বক্তব্য শোনার পরেই টুইট করেন ট্রাম্প। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি অসম্ভব নয়। অ্যামেরিকা সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।

Originally posted 2020-06-19 11:41:25.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *