যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো দুই পররাষ্ট্র সচিবের

করোনাকালীন অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অপ্রীতিকর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব। ভ্যাকসিন সহযোগিতা, বাবল এয়ার, জয়েন্ট কনসালটেটিভ মিটিং, মুজিববর্ষ, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। বুধবার (১৯ আগস্ট) ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে বুধবার দুপুরে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনাকালের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বিষয়ে সম্পর্ক কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সেটি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছি।’

তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্কে যে অপ্রীতিকর বিষয়গুলো আছে সেটি নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আগামী মাসে আমরা চেষ্টা করবো বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক করার জন্য। ওই বৈঠকের আগে তিনি প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন। যাতে করে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আমরা পরিহার করতে পারি। এ বছর প্রথম সাত মাসে সংখ্যাটি বেড়ে গেছে বিভিন্ন সময় থেকে এবং এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’

সচিব বলেন, আপনারা জানেন বেনাপোল-পেট্রাপোলে পণ্য পরিবহন যেভাবে আটকে গিয়েছিল, সেই জায়গাতে ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য চলাচলে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আস্তে আস্তে স্থলপথ খুলে দেওয়া হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দিল্লি থেকে কী বার্তা নিয়ে এসেছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, দিল্লির বার্তা হচ্ছে কোভিডের সময়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক নেই, সেটার একটি ব্রেক-থ্রু হিসেবে এই সফর। করোনার এই সময়ে এটা শ্রীংলার প্রথম সফর জানিয়ে তিনি বলেন, সময় স্বাভাবিক হলে বিভিন্ন ধরনের বৈঠক হতো, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আসতো এবং আমি যেতাম।

কোভিড নিয়ন্ত্রণে ভারতের প্রচেষ্টা চলছে এবং ভ্যাকসিন তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘আমরা অফার করেছি যে ট্রায়াল রানের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং তারা ইতিবাচক ভাবে সাড়া দিয়ে বলেছে তারা যে ভ্যাকসিনগুলো ডেভেলাপ করছে, সেটি শুধু ভারতের জন্যই নয়, আমাদের জন্যও দেওয়া হবে। ভারতের যে ওষুধ কোম্পানিগুলি আছে এবং সেখানে কোলাবরেশনের সুযোগ তৈরি হতে পারে এবং আমরা সহযোগিতা চেয়েছি।’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতের যে লোকগুলো কাজ করছিল সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এখন আবার আসা শুরু হয়েছে। দুদেশের মধ্যে এয়ার বাবলের প্রস্তাব দিয়েছি এবং এটি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে এবং আশা করছি এটি আমরা দ্রুত করে ফেলতে পারবো।’তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যে সুবিধা হবে যে প্রচুর বাংলাদেশি ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিল তাদের যাওয়া শুরু করা সম্ভব হবে। ভারতের থেকেও অনেক বিশেষজ্ঞ আসবে এবং বাংলাদেশ থেকেও যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এইসব বিবেচনায় এনে এয়ার বাবল দ্রুত শুরু হতে পারে।

ভারত নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হয়েছে। তারা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করবে। নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে। মাসুদ বলেন, ‘আমাদের একটি উদ্বেগ আছে এবং সেটি হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক চেষ্টা করে এসেছি যাতে করে নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজুলেশন পাশ করা যায়।’নিরাপত্তা পরিষদের কয়েক স্থায়ী সদস্যের বিরোধিতার কারণে এটি হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। একদিকে ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ভালো সম্পর্ক আছে এবং ভারত অবকাঠামোসহ বেশ কিছু জিনিস তৈরি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এগুলো যেন তারা অব্যাহত রাখে এবং মিয়ানমারকে চাপ দেয় প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য।’

দুদেশের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট কনসালটেটিভ মিটিং এর ব্যবস্থা আছে যা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হয়েছিল। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এটি দ্রুত শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটির একটি ভালো দিক হচ্ছে বিভিন্ন লাইন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা যাবে এবং সেই সমস্ত প্রকল্পগুলি আরও দ্রুত হবে। দুই দেশের সুবিধা অনুযায়ী আমরা এই বৈঠক করবো।’ কোভিড সময়ে ট্রান্সশিপমেন্টের ট্রায়াল রান হয়েছে এবং এটি একটি ইতিবাচক দিক বলে জানান সচিব।

বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে বেশ কিছু মিথ্যা নেতিবাচক সংবাদ বিষয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘সেটি নিয়ে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছি। আমরা একমত হয়েছি যে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া আছে, আমাদের সম্পর্কের যে বর্তমান অবস্থা উন্নততর আছে, আপনাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই মেসেজটি দিতে পারি সেটির চেষ্টা করবো।’

সরকারের মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা ছিল এবং কোভিডের কারণে কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বাকি সময়ে কিভাবে এটি এগিয়ে নেওয়া যায় সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। জাতিসংঘ সদর দফতরসহ বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে কিভাবে অনুষ্ঠান করা যায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। ভারতও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, সামনের বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একই বছর দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও সুবর্ণজয়ন্তী। এ নিয়ে আমরা আলাদা অনুষ্ঠান করবো, এ বিষয়েও আলোচনা করেছি।

Originally posted 2020-08-19 22:52:46.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *