মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে
মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা শ্রমিকেরা কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে সেদেশের চারটি খাতে বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। গত ১৬ নভেম্বর থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেছে দেশটি, চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, নির্মাণ, উৎপাদন, বনায়ন ও কৃষি খাতে বিদেশি অবৈধ শ্রমিকেরাই কেবল বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই কর্মসূচির জন্য কোনো এজেন্ট বা ভেন্ডার নিয়োগের প্রয়োজন নেই। মালয়েশিয়ায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে শুধু বাংলাদেশিরাই নন, বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবেন মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে তালিকাভুক্ত ১৫টি দেশের অনিয়মিত কর্মীরাও।
আবেদনে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে
মালয়েশিয়া সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী, এই সুবিধা পেতে হলে কর্মীকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি মালয়েশিয়ায় অন্তত বৈধ উপায়ে প্রবেশ করেছেন, পরবর্তী সময়ে অবৈধ হয়ে গেছেন। অর্থাত্, অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে এই সুবিধা নেওয়া যাবে না। কোনো বিমানবন্দর বা সীমান্তবন্দর দিয়ে বৈধ উপায়ে প্রবেশের প্রমাণ থাকতে হবে। যারা আবেদন করবেন, তাদের পাসপোর্টে অন্তত ১৮ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। ফলে যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের দ্রুত নবায়নের জন্য আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকমিশন। তবে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের প্রধান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, অভিবাসনজনিত অপরাধে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন এমন কর্মীরা এই সুবিধা পাবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালয়েশিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি অনিয়মিত শ্রমিক বলেন, পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে দুই বছর। সব সময় ভয়ে ভয়ে চোরের মতো থাকতে হয়, কখন এসে পুলিশ ধরবে। এবার আবেদন করে বৈধ হয়ে গেলে অন্তত নিশ্চিন্তে থাকতে পারব।
যে প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার কার্যক্রম চলবে
কোনো কর্মী সরাসরি আবেদন করতে পারবেন না। যারা শ্রমিক নিয়োগ দেবে, সেই প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন করবে। যেসব কোম্পানি এই চারটি খাতে শ্রমিক নিয়োগ করতে চায়, তারা অবৈধ শ্রমিকদের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব লেবার ফর পেনিনসুলার মালয়েশিয়ার ইন্টিগ্রেটেড ফরেন ওয়ার্কার্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অনলাইনে আবেদন করবেন।
প্রথমেই অভিবাসন দপ্তর তাদের আইনগত বিষয়টি যাচাই করে দেখবে। এরপর সেই আবেদন যাবে শ্রম দপ্তরে। তাদের অনুমোদনের বিষয়টি আসবে। অনুমোদন মিললে ইমিগ্রেশনে আঙুলের ছাপ, মেডিক্যাল, করোনা ভাইরাস পরীক্ষা, বিভিন্ন ফি প্রদানের বিষয় আসবে। সাত দিনের মধ্যে এই আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ করে দপ্তরটি। সেখানে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা হবে। যেমন কত দিনের জন্য এই কর্মীদের নিয়োগ করছে কোম্পানি, কী ধরনের কাজে তাদের নিয়োগ করা হবে, সেখানে কর্মীর সংকট কতটা রয়েছে, সেই খাতে বর্তমানে বিদেশি ও দেশীয় কর্মী কতটা কাজ করছে ইত্যাদি।
কত খরচ হবে?
বৈধ হতে সরকারিভাবে কত টাকা খরচ হবে, দেশটির অভিবাসন বিভাগ সেই তালিকা প্রকাশ করেছে। ইমিগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ডিপোজিট ফি ৫০০ রিঙ্গিত, কমপাউন্ড (জরিমানা) ১ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত, লেভি ১ হাজার ৮৫০ রিঙ্গিত, করোনা টেস্ট ৩৮০ রিঙ্গিত, মেডিক্যাল ফোমিমা ১৮০ রিঙ্গিত, পারমিট (পিএলকেএস) ২০৫ রিঙ্গিত এবং ইনসিওরেন্স ১৮০ রিঙ্গিত। সব মিলিয়ে খরচ ৪ হাজার ৭৯৫ রিঙ্গিত (বাংলাদেশি টাকায় ৯৫ হাজার ৯০০ টাকা)। নিয়োগদাতা কোম্পানির খরচ সম্পূর্ণ আলাদা।
তবে মোট কতজন শ্রমিক বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন, বৈধ হওয়ার পরে কত দিন এই কর্মীরা মালয়েশিয়ায় বসবাস করতে পারবেন—এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র বা অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। যারা দেশে ফেরত যেতে চাইবেন, তাদের কোনো জরিমানা দিতে হবে কি না, তা-ও পরিষ্কার নয়।
এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশন জানিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি তারা পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রকাশ করবে। সেজন্য কিছুদিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই গাইডলাইন প্রকাশের আগ পর্যন্ত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।