বিদেশফেরত সেই ২১৯ বাংলাদেশিকে অব্যাহতি

অবশেষে বিদেশফেরত ২১৯ বাংলাদেশিকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ হওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় সে দেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। করোনা মহামারিতে তাদের কারাদণ্ড মওকুফ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় সে দেশের সরকার। দেশে এসেও ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ থাকায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

বিদেশফেরত ২১৯ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক তৎপরতার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বিলম্বিত হয়। ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়।

রোববার (১৫ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ পুলিশের দেয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার তাদের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।

আদালতে তুরাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিদেশফেরত আরও ১৯৭ বাংলাদেশিকে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার দায় হতে অব্যাহতি দানের আবেদন রয়েছে। ধার্য তারিখে আবেদনগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

গত ২৭ অক্টোবর তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ ২১৯ জন বিদেশফেরত আসামির অব্যাহতি দানের আবেদনসহ প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনটি গ্রহণের জন্য রোববার (১৫ নভেম্বর) ধার্য তারিখ ছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্ণিত প্রত্যেকের বাড়ি ভিন্ন ভিন্ন জেলা, থানা এলাকায় অবস্থিত। আসামিরা বিদেশে কারাগারে ছিল মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তকালে অনেক আসামির ঠিকানা তারতম্য পাওয়া যায়। ফলে বিভিন্ন পন্থায় তাদের সঠিক ঠিকানা সংগ্রহ করে বারবার বেতার বার্তা ও ই/এস প্রেরণ করে যাচাই করতে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। তবে আসামিরা কোয়ারেন্টাইনে থাকায় তারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কি-না, সন্দেহের অবকাশ থাকায় তাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। যে কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক তৎপরতার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫ ধারায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বিলম্ব হয়। ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধে জড়িত থাকার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় দায় হতে অব্যাহতি দানের আবেদনসহ প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।

গত ৩ সেপ্টেম্বর ২১৯ বিদেশফেরত বাংলাদেশির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এদিন তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ প্রতিবেদন দাখিল না করে আদালতের কাছে ৩০ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার সময় আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২১৯ বিদেশফেরত আসামিকে গত ৪ জুলাই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সোপর্দিত ২১৯ জনের মধ্যে কুয়েত হতে ১৪১ জন, কাতার হতে ৩৯ জন এবং বাহরাইন হতে ৩৯ প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে উল্লিখিত দেশসমূহে কারাগারে ছিলেন বলে পত্র পাওয়া যায়। করোনাভাইরাস মহামারির বিষয়টি বিবেচনা করে উপরোক্ত দেশসমূহ বিশেষ বিবেচনায় তাদের সাজা মওকুফ করে মুক্তি প্রদান করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

‘উল্লিখিত আসামিরা বিদেশে থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। যা শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত ডায়েরির বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধায় সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে জোর তদন্ত অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সকল সোপর্দিত আসামির নাম-ঠিকানা, পিসি, পিআর, পূর্বেকার কর্মকাণ্ড, পূর্বের ইতিহাস ইত্যাদি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাসমূহে পৃথক পৃথকভাবে অনুসন্ধান স্লিপ প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সকল আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায় নাই। এছাড়া আদালতের নির্দেশে ১৩ জন হাজতি আসামিকে কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের নিকট হতে তদন্তে সহায়ক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ডায়েরির বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধায় তা সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে অন্যান্য সংস্থাও অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় সার্বাক্ষণিক মনিটরিং করছেন। তাই ডায়েরির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত সমাপ্ত করা সম্ভবপর হয়নি বিধায় সুষ্ঠু তদন্তের সার্থে আরও ৩০ কার্যদিবস বর্ধিত সময় একান্ত প্রয়োজন।’

গত ৪ জুলাই ২১৯ বিদেশফেরত বাংলাদেশিকে কারাগারে পাঠান আদালত। তাদের মধ্যে ১৪১ জন কুয়েত, ৩৯ জন কাতার এবং ৩৯ জন বাহরাইনফেরত।

তাদের তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ীর কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে থাকাকালীন তারা বিভিন্ন সময় গ্রুপভিত্তিক সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের জিডি (সাধারণ ডায়েরি) মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

করোনা মহামারি চলাকালে বিদেশফেরত আরও ১৯৭ বাংলাদেশিকে অব্যাহতি দানের আবেদন করেছেন পুলিশ। ধার্য তারিখে পুলিশের দেয়া আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আদালত পুলিশের দেয়া আবেদনটি গ্রহণ করলে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার দায় হতে তারা অব্যাহতি পাবেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর বিদেশফেরত আরও ৮৩ বাংলাদেশিকে কারাগারে পাঠান আদালত। তাদের মধ্যে ৮১ জন ভিয়েতনাম এবং দুজন কাতারফেরত। এছাড়া করোনা মহামারি চলাকালে কাতার থেকে ৩৬ জন, মালদ্বীপ থেকে ৪৬ জন এবং সিরিয়া থেকে ৩২ জন ফেরত আসেন।

Originally posted 2020-11-15 22:35:09.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *