ফ্রান্সে মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতিক ইবনে সিনা হসপিটাল

বদরুল বিন হারুন:- দীর্ঘদিন বাঘের বাচ্চাদেরকে খাচায় বন্ধীকরে পিঠে চালকের ঘা দিয়ে প্রশিক্ষিত করে লালন পালনের মাধ্যমে তাকে তার চৌদ্দগুষ্টির নাম ভুলিয়ে দেয়া সম্ভব।এর ফলে এক সময় শিশুরা তার উপর ছুয়ার হয়।তাকে নিয়ে খেলতামাশায় মেতে ওঠে।এদিকে বেচারা তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে এক সময় গাধার প্রজাতি হিসেবে তার নিয়তি মেনে নেয়।

আজ মুসলিম জাতিকে বিজাতিয়তরা এমন ভাবেই শিক্ষা দীক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের বাপ দাদার আসল ইতিহাস ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিয়েছে।তারা এখন নিজ দেশেও প্রবাসী।

কথা বলছি একটি ঐতিহাসিক হসপিটাল নিয়ে। মুসলিম ইতিহাসের এক মিনার যা ফ্রান্সের মুসলমানদের এক গৌরবোজ্জল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে যুগের পর যুগ।আজ আত্মভুলা কয়জন মুসলমান তা খবর রাখি।

ফ্রান্স কেন মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ফ্রান্সের সাথে পশ্চিম আরব ও আফ্রিকার সম্পর্ক রয়েছে।দীর্ঘ দিন আফ্রিকার শাসক ফ্রান্স তার উপনিবেশের ফলে তাদের পক্ষে লক্ষ লক্ষ আফ্রিকান আরব মুসলমানদ যুদ্ধ করেছে।মৃত্যুবরণ করেছেন বহু মুসলিম।তাদের এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবদানের জন্য।এমন একটি নিদর্শন হলো প্যারিস ববিনীতে অবস্থিত কালের সাক্ষী hôpital avisenne।

hôpital avisenen বা ইবনে সিনা হসপিটাল

1935 সালে প্যারিস বড় মসজিদে দশ বছর পর উত্তর আফ্রিকান ইমিগ্র্যান্টদের ত্যাগ ও বিশ্বযুদ্ধে প্রতি মুসলমানদের অবদানের দ্বিতীয় স্বীকৃতির প্রতিক হিসেবে (Hôpital franco-musulman de Paris) ফরাসী সরকার প্রদান করেছিলো।এই হসপিটালটি আজ ফ্রান্সের একটি গৌরবময় হসপিটাল এবং ঐতিহাসিক স্থান।
1978 সালে হসপিটালটির নাম পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক ইবনে সীনার নামে নাম করণ করা হয়।(ইনসাক্লোপিডডিয়া বৃটানিকা hôpital avicenne de paris 2016)

এই উদ্বোধনের প্রত্যক্ষ বর্ধন হিসাবে, আলজিয়ার্সের একজন ডাক্তার, আমাদি লাফোঁট, প্রকাশ্যভাবে প্যারিস অঞ্চলে মুসলমানদের, একটি হাসপাতালের ধারণা চালু করেছিলেন। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় এভাবে একটি “লাফ্ট কমিটি” গঠন করা হয়েছিল [

প্রকল্পটি আন্ড্রে-পিয়েরি গডিন (১৯৫৪) প্যারিসের পৌর কাউন্সিলর এবং আলজেরিয়ার প্রাক্তন উপনিবেশিক প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকান নেটিভদের নজরদারি ও সুরক্ষার জন্য এই সার্ভিসের প্রতিষ্ঠা। প্যারিস অঞ্চলের কারখানায় ভাড়া নেওয়া এবং আরব ও বারবার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার উপর নজরদারি করা।
গডিনের চিন্তা ছিলো-এই হসপিটাল দ্বারা এক দিকে জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা সাথে মুসলমানদের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যায়ভার নিজ ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যাবে।নিয়ন্ত্রণ থাকবে নিজ হাতে।হসপিটালটি একটি পুলিশি নজরদারির আওতাভুক্ত থাকবে।1930 পর্যন্ত এই হসপিটালটি একটি দ্বিমুখী সুবিধা নীতির আওতায় পরিচালিত ছিলো।স্বাস্থ্য এবং পুলিশি নজরদারি। কমিউনিস্ট মেয়র ও স্থানীয়দের তুমুল বাদার মুখে এই হসপিটালটি ববিনীর মুসলিম কবরিস্থানের একটি সস্তা জমিতে স্থাপিত হয়।

1935 সালের 22 মার্চ প্যারিসের ফ্রাঙ্কো-মুসলিম হাসপাতালের নামে এই হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছিল। এরপর এটি প্যারিসের মুসলিম রোগীদের জন্য সংরক্ষিত হয়। হাসপাতালটি প্যারিস পুলিশ সদর দফতরের অধীনে স্থাপন করা হয়েছে এবং উত্তর আফ্রিকার নেটিভদের নজরদারি ও সুরক্ষার জন্য পরিসেবাটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে (এসএসপিআইএনএ, এখন উত্তর আফ্রিকার আদিবাসী বিষয়ক পরিষেবা) ।

প্রথমিকভাবে, প্যারিসের অন্যান্য হাসপাতালে উপস্থিত সমস্ত মুসলমানকে পুলিশী বাসে করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো।আলজেরিয়ার মিত্র সম্প্রদায়ের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাডল্ফ গেরোমালি, যিনি এই সেবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন (প্যারিসে রেকু লেকোম্টে) ছিলেন ফ্রাঙ্কো-মুসলিম হাসপাতাল এবং নার্সিং স্কুলের প্রথম পরিচালক। (১৯৩২ সালে নিযুক্ত) ফ্রেঞ্চো-মুসলিম হাসপাতালের যক্ষ্মা সেবার কর্ণধার অধ্যাপক আলী সাক্কা ১৯৪০ সালে জার্মানরা এলে পদত্যাগ করেছিলেন।

মূলত ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি উত্তর আফ্রিকার নির্দিষ্ট প্যাথলজির জন্য মূল ভবনের কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রশাসনিক এবং সাধারণ পরিষেবা কার্য রয়েছে। বাম দিকটি হ’ল যক্ষ্মা রোগীদের, ডানি যা সাধারণ ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের। সম্পূর্ণটি বহিরাগত রোগীদের জন্য নিবেদিত একটি বৃহত্তর অ্যাঙ্কেক্স পরীক্ষাগার দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে, এবং একটি গবেষণা ভূমিকাও পালন করছে ।
এই সময়ের মধ্যে, নার্সিং কর্মীদের একটি বড় অংশ আরবি বা কাবিল কথা বলে এবং বেশিরভাগ চিকিত্সক উত্তর আফ্রিকার সাথে যুক্ত। ছাত্র নার্সরা আরব সংস্কৃতি এবং ভূগোলের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। হাসপাতালটি মরক্কো, আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়া থেকে ইন্টার্ন এবং ওয়েন্টার্নকে স্বাগত জানিয়ে উত্তর আফ্রিকার মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি রেফারেন্সে পরিণত হয়েছে।

১৯৪০ সালের নভেম্বরে, জার্মান সেনাবাহিনী কর্তৃক এই হাসপাতালটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল কারণ এটি ছিল নতুন এবং তত্কালীন অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। যক্ষ্মা সেবার কর্ণধার অধ্যাপক আলী সাক্কা দখলকারীদের আগমনের আগে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর ইন্টার্ন আহমেদ সোমিয়া, বোবিনির টাউনহলের সাহায্যে, মেডিকেল ডিভাইসগুলি টাউন হলের একটি সংযুক্তিতে “স্থানান্তরিত” করেছিলেন। হাসপাতালের নিজস্ব পরীক্ষাগারে, ফার্মাসিস্ট অ্যালিস রোলন বোবিনী জনগণের সুবিধার জন্য একটি গবেষনাগার চালু করেন।( Résistance Avicenne » (consulté le 8 mars 2018))

1945 এর পরে, হাসপাতালটি ধীরে ধীরে পুরো জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং মুসলমানদের আর প্রয়োজনে শুধু ববিনীতে সীমাবদ্ধ থাকে নি। প্যারিস পুলিশ সদর দফতরের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে।

1978 সালে, হাসপাতাল আরবি আবু আলী আল-হুসেন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা নামে মুসলিমদের অন্যতম মহান ব্যক্তিত্ব অ্যাভিসেনা নামটি গ্রহণ করেছিল। যিনি ছিলেন একই সাথে ডাক্তার, দার্শনিক

Originally posted 2021-02-16 05:15:21.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *