পদ্ম বিলে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যে

প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পদ্ম ফুলে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ধর্মনগর গ্রামের কালিবাড়ি পদ্ম বিলে। আর এই পদ্ম ফুল যেন প্রকৃতিকে সাজিয়েছে এক অপরূপ সৌন্দর্যে।দুর থেকে মনে হয় যেন কেউ ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে।

সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন এখানে ভিড় করছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটো রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন করে দর্শনার্থীরা এখানে আসছেন।

কেউ স্ত্রী সন্তান নিয়ে, কেউ বা এসেছেন পরিবারের সদস্য নিয়ে ,আবার কেউ বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন নিয়ে এখানে বেড়াতে আসেন। বিকাল থেকেই তরুণ তরুণীরা আড্ডা , নৌকা চড়া, আনন্দ আর হৈচৈ করে। ভ্রমণ পিপাসুরা যেন মাতিয়ে তুলেন পুরো এলাকা।

সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীরা নৌকায় ঘুরে বেড়ানো আর বিল জুড়ে পদ্মফুলের সাথে ছবিতোলে ফ্রেমে বন্দি করে রাখছেন অনেকেই। তবে দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় লোকজনেরা খুবই তৎপর রয়েছে।

আখাউড়া থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে কালিবাড়ি পদ্ম বিলটি অবস্থিত। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগ থেকে বর্ষাকালে এই বিলে প্রাকৃতিকভাবে পদ্ম ফুল জন্মে। এই কারণেই এই বিলটি পদ্ম বিল নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

কালিবাড়ি পদ্ম বিলটি প্রায় ২০০ একর বিলের মধ্যে দৃষ্টি নন্দন পদ্ম ফুল পানিতে ভাসছে। পানির উপর বিছানো সারি সারি সবুজ পাতা আর হাজারো পদ্মে নয়নাভিরাম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে আসে এক অন্য রকম প্রশান্তি। ভ্রমনপ্রিয় লোকদের কাছে এপদ্ম বিলটি যেন দিন দিন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই বিলের মধ্যে অসংখ্য দৃষ্টি নন্দন সাদা লাল গোলাপী পদ্ম ফুলের ছড়াছড়ি। যেখানেই দৃষ্টি যাচ্ছে শুধু পদ্ম আর পদ্ম চোখে পড়ছে। নয়নাভিরাম পদ্মে প্রকৃতিকে এক অপরূপ সৌন্দর্যে যেন ফুটিয়ে রেখেছেন। আকাশে সূর্য উকি দেওয়ার পরপরই ভ্রমন পিপসু লোকজন আসতে শুরু করে। তবে বিকাল বেলায় সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে যায়। তারা থাকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত।

এই বিলের মধ্যে আছে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। আগত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ নৌকা দিয়ে ঘুরে পদ্ম ফুলের সাথে ছবি তুলে ফ্রেমে নিজেকে বন্দি করে রাখছেন। কেউ কেউ মনের আনন্দে ঘুরে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে অবলোকন করছেন। এ যেন এক অন্যরমক আনন্দ উন্মদনা পেয়ে বসেছে আগত লোকদের মনে। গোটা জেলার মধ্যে এ বিলটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘেষা কালিবাড়ি পদ্ম বিলের সংলগ্ন স্থানে বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশের সীমানা পিলার রয়েছে। পিলারের পশ্চিম পাশ বাংলাদেশের আখাউড়া কসবা, আর পূর্বপাড় উত্তর পূর্ব ভারতের ত্রিপুরার মাধবপুর গ্রাম।

মো. শরীফুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন,তিনি তার নানার কাছ থেকে শুনেছেন এই বিলে বর্ষাকালে শতবছরের ও বেশী সময় ধরে পদ্মফুল ফুটছে। সময় সুযোগ হলেই বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এখানে চলে আসা হয়। প্রাকৃতিক এই দৃশ্য দেখতে খুবই ভাল লাগে।

ঢাকা থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে দেখে তিনি স্ত্রী, পুত্র নিয়ে পদ্ম বিল দেখতে এখানে তার আসা। দৃষ্টি নন্দন পদ্মফুল দেখে তারা খুবই আনন্দিত।
বিজয়নগর থেকে আসা আসমা আক্তার বলেন, করোনায় দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে বসা। ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে পারছেন না তারা। তাই এখানে পদ্মবিল দেখতে আসা। পদ্মফুল দেখে খুবই ভাল লাগছে বলে জানায়। তিনি আরো বলেন সারি সারি ফুল এভাবে কখনও দেখিনি।

কলেজ ছাত্র ইশতিয়াক, কাজী রিপন, মো. সোহাগ বলেন, করোনাই দীর্ঘ দিন ধরে কলেজ বন্ধ। ইচ্ছা থাকলেও বাড়ি থেকে কোথাও বের হতে পারি না। তাই বন্ধুদের নিয়ে এখানে পদ্ম বিলে চলে আসা। মুক্ত বাতাস আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নৌকা চড়া সত্যিই খুবই ভালো লাগেছে।

কালিবাড়ি গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে বর্ষাকালে এই বিলটিতে পদ্মফুল ফুটছে। আগে লোক সংখ্যা কম হত। দিন যতই যাচ্ছে লোক সংখ্যা যেন আসা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশ স্বধীন হওয়ার আগ থেকেই এই বিলে পদ্ম ফুল দেখেছি। তখন এতো বেশী ছিলনা। দিন দিন ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পদ্ম বিল দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। বিনোদন প্রিয় লোকদের কাছে এই স্থানটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল এক দিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে পাশাপাশি দর্শনার্থীদেরকেও মুগ্ধ করছে।

Originally posted 2020-08-31 20:21:43.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *