দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ

করোনা মহামারীর ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ভারত। তাদের প্রবৃদ্ধি হবে মাইনাস ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস রিপোর্টে এসব বলা হয়েছে।

মহামারীর অভিঘাত প্রলম্বিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মীদের ওপর অযৌক্তিক খড়্গ নেমে এসেছে। লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কমে এসেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এসব পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়াকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তার পরও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভারত- পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ।

করোনা মহামারীর আগে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। এর পরে ২০২০ সালে তা হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়ে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে দাবি সংস্থাটির। এ সময় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে মালদ্বীপ ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরে শ্রীলঙ্কা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, আফগানিস্তান ২ দশমিক ৫, ভুটান ১ দশমিক ৮, নেপাল শূন্য দশমিক ৬ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে মজুরি কমে যাবে। ফলে বেসরকারি ভোগব্যয় কমে যেতে পারে। তৈরি পোশাকের চাহিদা তৈরি হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে চরম বিপত্তি দেখা দিতে পারে।

সম্প্রতি রেমিট্যান্স বাড়লেও তা সাময়িক মনে করছে বিশ্বব্যাংক। করোনার কারণে ফেরত আসা প্রবাসীদের সঞ্চয়ের কারণে রেমিট্যান্স এখন বাড়ছে। তবে আগামীতে এ ধারা না-ও থাকতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে কর্মীর চাহিদা তেমন বাড়ার আভাস দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। কৃষির বাইরে বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের যে কর্মীরা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে এর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শ্যাফার বলেন, করোনা এ অঞ্চলে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ক্ষতি করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। তবে প্রভাব কমানোর জন্য সরকারের যে নীতি অবলম্বন করেছে তা সঠিক দিকে আছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন।

বলেন, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো যেন টেকসই হয়, সে জন্য সরকারকে আর্থিক খাত ও ঋণ ব্যবস্থাপনার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। আর্থিক খাতকে মজবুত করার দিকে নজর দিতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

করোনা সংক্রমণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং অনানুষ্ঠানিক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে করোনার প্রভাব দীর্ঘায়িত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শমিক ২ শতাংশ হবে বলে বাংলাদেশের প্রত্যাশা। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *