জেকেজি-রিজেন্ট কেলেঙ্কারি

করেনো টেস্টের ওপর মানুষের আস্থা কী ফিরবে?

করোনাভাইরাসের টেস্ট নিয়ে দেশের মানুষের মনে শুরু থেকেই ছিল নানা প্রশ্ন। শুরুতে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম সংখ্যক টেস্ট করা হয়। পরবর্তীকালে টেস্টের সংখ্যা বাড়লেও ফলাফল পেতে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করায় টেস্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে দেখা দিয়েছিল নানা প্রশ্ন। করোনা টেস্টের ওপর মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলার মাঝেই ঘটে জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারি।

জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের দেওয়া করোনা টেস্টের ভুয়া ফলের কারণে মানুষের মনে করোনা টেস্টের ওপর আস্থা তলানিতে নেমেছে। এ আস্থা ফিরবে কি না, সে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শারমিন ইয়াসমিন বলেন, ‘মানুষ যখন একবার আস্থা হারিয়ে ফেলে, তখন দু-একটি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন কাজ। আস্থা ধীরে-ধীরে ফিরে আসে।’ মানুষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে বলে মনে করেন তিনি।

করোনা টেস্ট নিয়ে শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও এ নিয়ে জোরালো সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ইতালির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের করোনা টেস্টের মান নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যেটি বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো বিব্রতকর। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন বাংলাদেশ থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের টেস্টের মান যেভাবে প্রশ্নের মুখে পড়েছে, তাতে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজির বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো অপরিহার্য, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়।’

তিনি বলেন, ‘কিছু না কিছু পদক্ষেপ নিতেই হতো। আন্তর্জাতিক মহলে এবং আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজারের জন্য আস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। এই চাপগুলো অবশ্যই একটা প্রেশার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টেস্ট না করেই করোনা পজিটিভ-নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়ার যে ঘটনা ঘটেছে, তা প্রমাণ করেছে যে স্বাস্থ্য খাতে কোনো নজরদারি ছিল না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলছেন, ‘করোনা মহামারিকে ঘিরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে চরম অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। শুধু দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া যাবে না।’

করোনা টেস্টের ওপর মানুষের আস্থা ফেরাতে কী করতে হবে-এমন প্রশ্নে বেনজির আহমেদ বলেন, ‘এ জন্য কয়েকটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, প্রমাণ করতে হবে যে টেস্টের মান নিশ্চিত করার জন্য ভালো মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, টেস্ট প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত আছে তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, নমুনা দেবার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো রোগীর ক্ষেত্রে যদি সন্দেহ হয়, তাহলে তার পরীক্ষায় যদি নেগেটিভও হয়, তাহলে নেগেটিভ বললেই চলবে না। তাকে আবারও পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো একটা জায়গায় হয়তো ফল্ট (ভুল) থাকতে পারে। এমন হতে পারে, যেদিন তার নমুনা নেওয়া হয়েছে, সেদিন হয়তো তার নাসারন্ধ্রে পর্যাপ্ত ভাইরাস ছিল না।’ এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে টেস্ট ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, শুধু জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতালই নয়, এর বাইরে আরও পাঁচটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করোনা টেস্ট করার অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৮০টি ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলোর মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি এখন থেকে নমুনা দেবার তিন দিনের মধ্যে টেস্টের ফলাফল দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

Originally posted 2020-07-16 22:01:33.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *