এরদোয়ানকে উৎখাতের পরিকল্পনা!

কুর্দি জনগোষ্ঠী ইস্যুতে তুর্কি প্রেসিডেন্টের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। তুর্কি সরকারকে মোকাবিলায় দেশটির বিরোধী শক্তিগুলোকে সমর্থন দেয়ার পক্ষেও মত দেন তিনি।

ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক টাইমসে দেয়া সাক্ষাতকারে বাইডেন এ মন্তব্য করেন। জানুয়ারিতে তার এ সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমটিতে। সে সময় বাইডেনের বক্তব্য নিয়ে খুব একটা শোরগোল হয়নি।

শনিবার সাক্ষাতকারের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তারপরই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলে তুর্কি প্রশাসন। নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বাইডেনের আচরণকে দাম্বিভকতা এবং তাকে ভণ্ড বলে কটাক্ষ করে আঙ্কারা।

নিউইয়র্ক টাইমস বাইডেনের কাছ জানতে চায় এরদোয়ান সম্পর্কে। তখন তিনি এরদোয়ানকে ‘একনায়ক’ আখ্যা দেন। সমালোচনা করেন তার কুর্দিনীতির। আহ্বান জানান তুরস্কের বিরোধীদের সহায়তার।

বলেন, আমি মনে করি আমাদের এখন তার আচরণের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া উচিৎ। বিষয়টি পরিষ্কার করা যে, আমরা এখন বিরোধীদের সমর্থন করছি।

এরদোয়ানকে চড়া মূল্য দিতে হবে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের উচিৎ তুর্কি বিরোধীদের উৎসাহী করা। এরদোয়ানকে পরাজিত করে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য। কোনো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার অনুসরণ করে।

বাইডেনের এমন মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্ক।

বাইডেনের বক্তব্যকে সত্য অস্বীকার, দাম্ভিকতা এবং ভণ্ডামি বলে আখ্যা দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন।

এক টুইটে তিনি বলেন, তুরস্ককে আদেশ করার দিন শেষ হয়ে গেছে। তারপরও যদি ভাড়াটেদের মাধ্যমে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তাহলে, আপনাকে চড়ামূল্য দিতে হবে।

এরদোয়ানের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ফাহরেথিন আলতুন বলেন, বাইডেনের বক্তব্য কর্তৃত্ববাদী এবং তুরস্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের কূননৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

টুইটে বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে আলতুন বলেন, তুরস্কের জাতিসত্ত্বা এবং গণতন্ত্রে কেউ আঘাত করতে পারে না। প্রশ্ন তুলতে পারে না আমাদের প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে। তিনি সাধারণ মানুষের ভোটে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন।

ন্যাটো জোটভুক্ত মিত্র দেশের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর এমন অশোভন বক্তব্য কূটনীতি বহির্ভুত বলে আমরা মনে করি। বলেন আলতুন।

বাইডেনের এমন বক্তব্যে তুরস্কের বিরোধীদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। কারণ বর্তমান সরকার বিরোধীদের বিরেুদ্ধে বিদেশি শক্তির সহায়তায় দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টার অভিযোগ তুলে আসছে বহুদিন ধরে।

বিরোধী দল সিএইচপি পার্টির কয়েকজন কর্মকর্তা বাইডেনের বক্তব্যের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তুরস্কের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর জন্যও বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এরদোয়ানের সুসসম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্প নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় লড়াই করছেন। মাঝে মাঝে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করতেও ছাড় দেন না এরদোয়ান।

বাইডেন বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

ওবামা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অবনতি হয়। সে সময় সিরিয়া ইস্যুতে তুর্কিনীতি এবং তুরস্কের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার জেরে ওয়াশিংটন-আঙ্কারার মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়।

যদিও রাশিয়া থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় এবং আঙ্কারার সিরিয়ানীতির কারণে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতিক সম্পর্কে ছিড় ধরে। তুরস্কেরর রাষ্ট্রীয় ব্যাংককে ইরানে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করে ওয়াশিংটন। তারপরও ট্রাম্প এবং এরদোয়ানের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

Originally posted 2020-08-16 21:21:40.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *