একটি স্বপ্নের দ্বার উন্মোচন

বাবলুর রহমান-

বহূল প্রতীক্ষিত কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) সকাল পৌনে ১২টায় মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর ১২টায় উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।

এদিন সকাল ১০টা ৫ মিনিটে পদ্মা সেতুর থিম সং পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগে সেতু উদ্বোধন করতে হেলিকপ্টারে পদ্মার মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা।

ম্যুরাল-১ উদ্বোধনের আগে নির্ধারিত মঞ্চে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পরে বক্তব্য রাখেন সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানের সভাপতি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

পরে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবং শুরু থেকে পদ্মা সেতুর প্রকল্পে জড়িত থাকা সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত। অনেক ষড়যন্ত্রের পর আমরা এ সেতু তৈরি করতে পেরেছি। পদ্মা সেতু আমাদের মর্যাদা-সক্ষমতার শক্তি।’

বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক ডাক টিকিট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০০ টাকার নোটের মোড়ক উন্মোচন করেন।

সেতু উদ্বোধনের পর সড়ক পথে জাজিরা প্রন্তের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু পার হয়ে তিনি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করে আবারও মোনাজাতে অংশ নেন।

সেখান থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশ্যে সড়ক পথে যাত্রা করেন। দুপুরে কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেন।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মান কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করেছে চীনের ঠিকাদার কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদী শাসন করেছে চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। মোট ৩০, ১৯৩৩.৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্ব-অর্থায়নে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

মূল সেতু নির্মাণের ব্যয় ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকা (৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার এবং গ্যাস লাইনের জন্য ১০০০ কোটি টাকা সহ) এবং ১৩.৮ কিলোমিটার নদী শাসন কাজের ব্যয় ৯,৪০০০.০ কোটি টাকা।

টোল প্লাজা এবং এসএ-২ সহ ১২ কিমি অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ ব্যয় ১,৯০৭.৬৮ কোটি টাকা (২টি টোল প্লাজা, ২টি থানা ভবন এবং ৩টি পরিষেবা এলাকা সহ) যেখানে পুনর্বাসনের ব্যয় ১,৫১৫.০০ কোটি টাকা, ২৬৯৩.২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় ১২৯০.৩ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি ৬৭৮৩.৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য (বেতন, পরিবহন, সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স, ফিজিক্যাল এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি, ইন্টারেস্ট ইত্যাদি) ১,৭৩১.১৭ টাকা।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পয়েন্টে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী নদী প্রশিক্ষণের কাজ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে তিনি জাপান সফর করেন। তিনি পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণে সম্মত হয়। যেহেতু পদ্মা নদী একটি শক্তিশালী নদী যার প্রবল স্রোত, জাপান পদ্মা নদী জরিপ শুরু করে এবং তারা তার অনুরোধে রূপসা নদীতে নির্মাণ কাজ শুরু করে।

জাপান ২০০১ সালে পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে জমা দেয়। জাপানি জরিপে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টকে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *