আমার বিরুদ্ধেও চুরির মামলা দেন : খালেদ মুহিউদ্দীন

দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। মামলা দায়েরের পর রোজিনাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতে পুলিশের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয় রোজিনাকে।

এদিকে রোজিনাকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল রাত থেকেই দেশের স্বনামধণ্য সাংবাদিকগণ তাদের সামাজিকমাধ্যমগুলোতে সরব হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন খালেদ মুহিউদ্দীন। জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের পরিচালনায় থাকা খালেদও গতকাল তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি চুরির অভিযোগে নিজেকেও গ্রেপ্তারের কথা বলেন।

‘আমার বিরুদ্ধেও মামলা দেন’ শিরোনামে খালেদ মুহিউদ্দীন লিখেছেন- ‘রোজিনার বিরুদ্ধে যে কারণে মামলা দিছেন, ওই কারণে আমার বিরুদ্ধেও মামলা দেন। নথি আমিও চুরি করছি। সদাশয় সরকার, মনে রাইখেন আমারে বা আমগরে নথি দেওনের বা দেখানোর সাহস আপনের নাই। খালি নথি দিয়া রিপোর্ট হয় না, আপনেরেই জিগাইতাম পরে যে এই কামডা কেন করছেন? আরও মনে রাইখেন রাষ্ট্রের বা মানুষের ক্ষতি করার কোনো সুযোগ আমাগো মত নথি চোরগো নাই। আপনারা যারা নথির কারবার করেন তাগো আছে। মনে আছে মেডেলের সোনা বা রূপপুরের বালিশ? ওপেন চ্যালেঞ্জ দিলাম, যুক্তি দিয়া দেখান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের কাছে এমন কোন নথি আছে যা প্রকাশ হইলে এই দেশের বা দেশের মানুষের ক্ষতি হইব?’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কক্ষ থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি চুরির চেষ্টা এবং মোবাইলে ছবি তোলার’ অভিযোগ আনা হয় রোজিনার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় যে মামলা করা হয়েছে, যেখানে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় চুরি এবং ১৯২৩ সালের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ ৩ ও ৫ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন সোমবার বিকেল ২ টা ৫৫ মিনিটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে রোজিনা ইসলাম নামীয় একজন নারী প্রবেশ করেন। এ সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। উক্ত নারী দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ-পত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকোনো এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। এ সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান দেখতে পান এবং তাকে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কি করছেন মর্মে জানতে চান।

এ সময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় প্রদান করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভীন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমীন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম, অফিস সহায়ক মো. মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফগণ ঘটনাস্থলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, ডকুমেন্টসগুলো তিনি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে শাহবাগ থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে জিম্মায় নেন। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয়/সংগ্রহ সংক্রান্ত নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মাঝে প্রতিনিয়ত পত্র এবং ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। উক্ত নারী যেসকল নথিপত্রের ছবি তুলছিলেন তার মধ্যে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও ছিলো। এসকল তথ্য জনসমক্ষে প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার অশঙ্কা রয়েছে। উল্লিখিত কাগজপত্রসমূহ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে।

রোজিনা ইসলাম ওই অফিস থেকে কোনো নথি সরানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তার এই সহকর্মী ‘আক্রোশের শিকার’ হয়েছেন বলে তাদের সন্দেহ।

Originally posted 2021-05-18 13:45:55.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *