আপনার শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কি না কীভাবে বুঝবেন

বাংলাদেশ পুলিশ বলছে চট্টগ্রামে একটা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ বলছে ঐ ব্যক্তি শিশুটির নিকট আত্মীয়। বিষয়টা জানতে পেরে শিশুটির অভিভাবক পুলিশের কাছে মামলা করে।

পুলিশ বলছে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশে পরিবারের সদস্য বা নিকটআত্মীয়দের দ্বারা শিশু নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমের খবর হতে দেখা যায় প্রায়ই।

একটা শিশু পরিবারের কারো দ্বারা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিনা সেটা কীভাবে বুঝতে পারবেন মা-বাবা বা শিশুর অভিভাবকেরা?

শিশুর আচরণের দিকে লক্ষ্য রাখা : ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমিন রহমান বলছেন, তিনি তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছেন শিশুরা বাইরের মানুষের দ্বারা নয় বরং পরিবারের খুব কাছের মানুষদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা অনেক দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে শিশুরা অপরিচিত ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা। এক্ষেত্রে বড় ভাই, কাজিন, চাচা, ফুফু, টিউটর, বাড়ির দারোয়ান বা কাজের লোক এরকম যেকোন ব্যক্তির দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হবার আশঙ্কা থাকে।

এসব ক্ষেত্রে শিশুর আচরণের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে

যেমন :

১. কোন একটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে শিশু যদি যেতে ভয় পায় বা যেতে না চায়

২. যেসব শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করা বন্ধ করে দেয় (৫ বছরের মধ্যে বাচ্চারা বিছানায় প্রস্রাব করা বন্ধ করে দেয়) তারা যদি হঠাত বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়

৩. যদি সে তার যৌনাঙ্গে ব্যথার কথা বলে

৪. শিশু হঠাৎ করে ভয় পাচ্ছে কিনা, চমকে উঠছে কিনা, অন্ধকার ভয় পায় কিনা এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে হবে।

৫. বাচ্চা হঠাৎ করে বিরক্ত হচ্ছে কিনা, মেজাজ খারাপ করছে কিনা, ছোট ছোট বিষয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে কিনা, টেনশন করছে কিনা এসব দিকগুলো খেয়াল করতে হবে।

৬. অনেক সময় বাচ্চারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয়, একা একা থাকে, মন খারাপ থাকে

৭. কোন কাজে মনযোগ দিতে না পারা, পড়ালেখাতে মনযোগ না থাকা, দৈনন্দিন কাজে আগ্রহ না থাকা

৮. অনেক সময় নির্যাতনের শিকার শিশু নিজের যৌনাঙ্গে হাত দিতে থাকে আবার অন্য বাচ্চাদের যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে থাকে।

অভিভাবকদের করণীয় কী : শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন অনেক ক্ষেত্রে একটা শিশু নিজেই বুঝতে পারে না কোনটা নির্যাতন।

নির্যাতনকারীরা খেলার ছলে অনেক শিশুকে নির্যাতন করে, শিশুরা তখন মনে করে এটা একটা খেলা।

ইশরাত শারমিন রহমান বলছেন, আবার নির্যাতনকারীরা নির্যাতনের পর শিশুকে ভয় দেখায়।

তিনি বলেন “বলে দিলে তোর বাবা বা মাকে মেরে ফেলবো” এমন কথা বলে শিশুকে ভয় দেখানো হয়।

শিশু তার বাবা -মাকে বলতে না পারার পিছনে আরেকটা কারণ কাজ করে সেটা হল বাবা-মায়েরা বিশ্বাস করতে চায় না।

এসব ক্ষেত্রে বাবা-মাকে যেটা করতে হবে :

১. ‘গুড টাচ-ব্যাড টাচ’ নামে যে ধারণা আছে সেটার সাথে বাচ্চাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ কোন স্পর্শ ভালো, কোনটা খারাপ সেটা শিশুকে বোঝাতে হবে।

২. মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে বুক, ঠোঁট, যৌনাঙ্গ এবং পশ্চাতদেশ-ছেলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঠোঁট, যৌনাঙ্গ এবং পশ্চাতদেশ এসব জায়গাকে স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই দুই বছর বয়স থেকে শিশুকে শরীরের এসব অঙ্গ সম্পর্কে ছবি একে বা গল্পের মাধ্যমে ধারণা এবং সচেতন করতে হবে। কিছুদিন পরপর তাদেরকে বিষয়টা মনে করিয়ে দিতে হবে।

৩. পরিবারের নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কেউ তার শরীরের এসব স্থানে হাত দিতে পারবে না এটা তাকে বলতে হবে, সেক্ষেত্রে বাবা-মা হতে পারে।

৪. যদি শরীরের এই অঙ্গগুলো কেউ স্পর্শ করে তাহলে তাৎক্ষনিক শিশুটি চিৎকার করতে পারে, চলে আসতে পারে, এবং যাকে পাবে তার কাছে বলে দিতে হবে। আর যখন বাবা-মাকে কাছে পাবে তখনি তাদেরকে সব খুলে বলবে-এটা শেখাতে হবে।

৫. বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে মন খুলে কথা বলা শেখাতে হবে, তারা যখন কিছু বলবে তখন বকাঝকা না করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে যৌন নির্যাতনের মত যে ঘটনাগুলো আছে সেগুলো ভয় না পেয়ে তারা বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করতে পারবে।

৬. নির্যাতনের ঘটনা যদি ঘটে তাহলে কখনো বাচ্চাকে দায়ি করা যাবে না। তাকে মানসিক সমর্থন করতে হবে, তার সামনে এই ঘটনা নিয়ে বার বার আলোচনা করা বা কান্নাকাটি করা যাবে না।

ইশরাত শারমিন রহমান বলছেন এছাড়া বাচ্চারা তাদের বাবা-মায়ের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক অনেক সময় দেখে ফেলে।

সেটা দেখে তারা আগ্রহের বশবর্তী হয়ে অন্য বাচ্চাদের সাথে সেটা করতে চায়। এটাতেও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় শিশুরা বলেন তিনি। সূত্র : সূত্র : বিবিসি বাংলা

Originally posted 2021-05-04 21:20:27.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *