
বাণিজ্য মেলায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও মানছেনা কেউ

ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় রীতিমতো জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) ছুটির দিনে মেলায় দর্শক সমাগম ছিল অন্য দিনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। আগারগাঁওয়ের সেই জমজমাট বাণিজ্য মেলা যেন আবার পূর্বাচলে ফিরে আসে গতকাল। তবে মেলায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও অনেক দর্শনার্থীকেই মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে।
সবাই মাস্ক পরে মেলায় প্রবেশ করলেও তাদের কেউ কেউ মেলায় প্রবেশের পর মাস্ক খুলে ফেলেন। আবার অনেকেই গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ফলে করোনা মহামারির এ সময়ে বাণিজ্য মেলা থেকে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন অনেকে। মেলায় এসে মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি করছেন এমন দর্শনার্থীদের একজন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা মাইনুল হক বলেন, মাস্ক পরলে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই মাস্ক খুলে ফেলেছেন।
তবে মাস্ক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপের কথা জানিয়ে মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেছেন, মেলায় দর্শনার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ মেলায় মাস্কবিহীন ঘোরাফেরা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হবে ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, মেলায় প্রবেশে গতকাল অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থীই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। ফলে মেলার প্রবেশদ্বারে ঠেলাঠেলি কিংবা চাপের মুখে কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। ছুটির দিন থাকায় গতকাল সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে।
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে আসা চাকরিজীবী রফিকুল আমিন বলেন, ‘ছুটির দিন থাকায় পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। খোলামেলা জায়গায় প্রাকৃতিক পরিবেশে মেলার আয়োজন হওয়ায় প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়েছে। মেলাটি উপভোগ করেছি, ভালো লেগেছে।’
আশুলিয়া থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার বলেন, ‘সুযোগের অভাবে এতদিন মেলায় আসতে পারিনি। কিন্তু পত্রিকা-টেলিভিশনে সংবাদ দেখে মেলায় আসতে ইচ্ছা করছিল। তাই ছুটির দিনে ছেলেমেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি।’
নরসিংদীর পলাশ থেকে আসা ব্যবসায়ী শাইনুল ইসলাম রাতুল বলেন, যানজটের কারণে দেড় ঘণ্টা পর মেলায় প্রবেশ করেছেন তিনি। তার মেলার আনন্দ ধুলায় আর যানজটে বিলীন হয়ে গেছে।
গতকাল মেলায় দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টলে তাদের পছন্দের পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখেন ও কেনাকাটা করেন। বেশি ভিড় ছিল শো-পিস, কাপড়, অলংকার, তৈজসপত্র, কুটির শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন ও কয়েদিদের উৎপাদিত পণ্যের স্টলে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। কিন্তু ফার্নিচার, মোটরবাইক, ফ্রিজ ও টিভির স্টলগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থী বেশি থাকলেও তুলনামূলক বিক্রি হচ্ছে কম। তবে এসব স্টলের শোরুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীরা ।
ফাহিম অ্যান্ড সোহানা ক্রোকারিজের বিক্রয়কর্মী ফাহিম মিয়া বলেন, ‘কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে বাণিজ্য মেলায় স্টল দেওয়া হয়েছে । এ জন্য বিশেষ ছাড়ে আমরা পণ্য বিক্রয় করছি।’ আকতার ফার্নিচারের দুলাল রায় বলেন, ‘নান্দনিক ডিজাইনের ফার্নিচার দিয়ে স্টল সাজিয়েছি। মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন কিন্তু ক্রেতা কম । তবে অনেকেই পরে ক্রয় করবেন। তাই শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন।’
শিক্ষা উপকরণ বিক্রয় স্টল পেনসিলের বিক্রয়কর্মী শাহরিয়ার আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের স্টলে বিভিন্ন ধরনের কলম, পেনসিল, জ্যামিতি বক্স ও রং তুলিসহ নানা শিক্ষা উপকরণ রয়েছে। ক্রেতাদের কাছে প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। গতকাল মেলায় বিক্রি যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি খাবারের স্টলগুলোতেও দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় ছিল। মেলায় ঘোরাঘুরি শেষে অনেকেই ফুচকা-চটপটির স্বাদ নিয়েছেন। কেউ পরোটা, বিরিয়ানিও খেয়েছেন। সঙ্গে কফি, আইসক্রিম তো ছিলই।