‘অটোপাসের’ যন্ত্রণা তাড়িয়ে বেড়াবে মেধাবীদের

করোনা প্রকোপ ঠেকাতে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের পর নানা শ্রেণির মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে একজন শিক্ষার্থী। আর শিক্ষাবিদ ও মনোবিজ্ঞনীরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাচভিত্তিক বৈষম্য বাড়বে এবং ভালো প্রস্তুতি ছিল এমন শিক্ষার্থীদের সারাজীবন ট্রমার মধ্যে থাকবেন। অনিয়মিত, প্রস্তুতি ভালো ছিল না এমন শিক্ষার্থীরাও ‘অটো পাসের’ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগবেন। কর্মজীবনে ‘২০২০ সালের পাস’ এমন নানা কটুক্তি, হাসি ঠাট্টার মুখে পড়তে হতে পারে এবারের শিক্ষার্থীদের। তাই একেবারে অটো পাস না দিয়ে বিকল্প কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ণ করা যায় কিনা সেটিও বিবেচনা নেয়ার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা ও শিক্ষাবিদরা।

বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, অটোপাস থাক, তবে কোন শিক্ষার্থী যদি যোগ্যতা পরিমাপের জন্য পরীক্ষা দিতে চায় তাকে সেই সুযোগ দেয়া হউক। যারা গড় ফল চেয়ে ভালো করতে আগ্রহী তারা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেশি সময় নিয়ে পরীক্ষা নেয়া যাবে। এ অটোপাস উচ্চ শিক্ষা প্রবেশ ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহীদের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক, গবেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এইচএসসির ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাইলে বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া যেত। কিন্তু সরকার কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি। কারণ এখানে অর্থনৈতিক লাভের কোন ব্যাপার নেই। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাচভিত্তিক বৈষম্য ছাড়াও মেধাবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, চাকরি জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে এ ব্যাচটি নানা বঞ্চনার শিকার হবেন। কর্মজীবনের প্রবেশসহ সব ক্ষেত্রে আগে ও পরের দুই তিনটি ব্যাচের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। যখনই শুনবে ‘২০২০ সালে এইচএসসি পাস’ তখন তাদের নানা কটূক্তি, হাসি ঠাট্টা করবে। এ মানসিক যন্ত্রণায় তাদের সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। মেধাবী ও ভালো প্রস্তুতি ছিল তারাই বেশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগবেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সরকারের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। তবে মেধা যাচাইয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান এ ধরণের বিষয়ে ১০০ বা ৫০ নম্বরের এক দিনে বা দুই দিনে পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ জামাল আনোয়ার বলেন, এ অটোপাসের ফলে সব শিক্ষার্থীরা দুই ধরনের অস্বস্তিতে থাকবে। শারীরিক অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যার কারণে দুই পরীক্ষা কোন একটিতে ভাল করতে পারেনি কিন্তু এইচএসসিতে সেটি পুষিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি ছিল তারা সারাজীবন মনের মধ্যে এই ক্ষত বয়ে বেড়াবে, পরীক্ষা হলে আমি হয়তো জিপিএ-৫ বা ভাল ফলাফল করতে পারতাম। অন্যদিকে নিশ্চিত ফেল করবে এমন শিক্ষার্থীও সারাজীবন অটো পাসের মানসিক অস্বস্তি তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।

চট্টগ্রাম বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীব চক্রবর্তী বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তে সুবিধা-অসুবিধা দুটোই থাকবে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের কথা মনে রাখতে হবে। পরীক্ষার সঙ্গে অর্ধলক্ষাধিক লোক জড়িত থাকে। সরকার পরীক্ষা না নিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করতে পেরেছে সেটাও বড় কথা।

Originally posted 2020-10-09 22:03:37.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *