
সারাদেশে নতুন করে লকডাউন হবে?

ঢাকা : করোনা মোকাবেলায় সরকার এখন স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউনের পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। সারাদেশের এলাকাগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করার প্রক্রিয়া চলছে। রেড জোন, ইয়েলো জোন এবং গ্রীন জোন। এই হিসেবে সবথেকে বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোকে রেড জোন করা হচ্ছে। যেখানে প্রতি ১ লাখে ৪০ জন বা তাঁর বেশি রোগী আছে সে এলাকাগুলোকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই গত মঙ্গলবার থেকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরেও কিছু কিছু এলাকাকে লকডাউন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, তাঁরা এই লকডাউনের কার্যকারিতা এবং ফলাফল দেখতে চায়। এটা একটি পাইলট প্রকল্প এবং এটা যদি সফল হয়, তাহলে এই ধারায় যখনই যেখানে সংক্রমণ বাড়বে সেখানে তখনই লকডাউন করে দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি স্বাভাবিকভাবে চালানো হবে।
অর্থনীতি যেন সচল থাকে সেজন্য পুরো দেশকে লকডাউন না করে স্থানীয়ভাবে লকডাউন করার যে পদ্ধতি তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউন যদি সফল না হয় এবং দেশজুড়ে যদি সংক্রমণের হার এভাবেই বাড়তে থাকে আরো সপ্তাহদুয়েক, তাহলে সারাদেশে নতুন করে লকডাউন দেওয়ার কোন বিকল্প থাকবে না।
সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, তাঁরা আরো দুই সপ্তাহ দেখতে চান। এই দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার আরো কিছু এলাকা এবং দেশের আরো কিছু বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোকে রেডজোনের আওতাভুক্ত করে লকডাউন করা হতে পারে।
তবে জোনভিত্তিক লকডাউন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, এই জোনভিত্তিক লকডাউনগুলো ইতিবাচক ফল দিবে। এর ফলে এই এলাকাগুলোতে যারা আক্রান্ত এবং আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ কন্টাক ট্রেসিং করা সহজ হবে। সব মানুষদের টেস্টের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর ফলে সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানো যাবে বলেও তাঁরা মনে করছেন। তবে কোন কোন বিশেষজ্ঞ এই স্থানীয় লকডাউনের সাথে একমত নন। তাঁরা বলেন যে, এটা যদি শুরুতে করা হতো, যেমন করোনা সঙ্কটের শুরুতে মিরপুরের টোলারবাগ এলাকাকে লকডাউন করা হয়েছিল এবং সেটার ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল।
কিন্তু এখন বাস্তবতা ভিন্ন। এখন সারাদেশেই সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়েছে। এই বাস্তবতায় করোনা মোকাবেলার জন্য লকডাউন খুব একটা ইতিবাচক ফল দিবে না বলে তাঁরা মনে করছেন। বরং এর ফলে অন্যান্য এলাকাগুলোতে সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সবথেকে বড় যে বিশেষত্ব, সেটা হলো যারা উপসর্গ নিয়ে আছে, তাঁরা দিনের পর দিন পরীক্ষা করতে পারছে না। যাদের উপসর্গ নেই তাঁরা পরীক্ষার মধ্যে যাচ্ছেন না, তাঁরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আর অনেকের উপসর্গ থাকার পরেও নানা বাস্তবতায় তথ্য গোপন করে সব মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয় লকডাউন কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে তাঁদের সন্দেহ রয়েছে।
তবে সরকারের একাধিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি সরকার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এই জোনভিত্তিক যে বিভাজন, সেই বিভাজনের সফলতার উপর নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত। তবে মনে করা হচ্ছে যে, যতদিন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন না আসবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মতো জনবহুল এলাকা দ্রুত করোনা থেকে মুক্তি পাবে এমন আশা করা দুরাশা মাত্র। আর এই বাস্তবতায় করোনার সঙ্গে বসবাসের কৌশলই সবথেকে উপযুক্ত বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
আর একারণেই সরকার আগামী দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করতে চাচ্ছে। দুই সপ্তাহে যদি পরিস্থিতি এরকমই থাকে বা আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং মৃত্যুর হার যদি অনেক বেশি বৃদ্ধি না পায় তাহলে হয়তো বাংলাদেশ এই পথেই থাকবে। দেশের অর্থনৈতিক গতিকে সচল রাখাই হবে সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
Originally posted 2020-06-13 06:00:49.